পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৮
মহাভারত

সসম্মানে বাস ক’রে এবং আমাদের অন্ন খেয়ে কেন আমাদের হরণ করছ? দ্রৌপদীকে স্পর্শ করার ফলে তুমি কলসস্থিত বিষ আলোড়ন ক’রে পান করেছ।

 যুধিষ্ঠির নিজেকে গুরুভার করলেন, তাতে রাক্ষসের গতি মন্দীভূত হ’ল। সহদেব বললেন, মহারাজ, আমি এর সঙ্গে যুদ্ধ করব, সূর্যাস্তের পূর্বেই যদি একে বধ করতে না পারি তবে আমি নিজেকে ক্ষত্রিয় বলব না। সহদেব যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হলেন এমন সময়ে গদাহস্তে ভীম সেখানে এলেন। ভীম রাক্ষসকে বললেন, পাপী, তুমি যখন আমাদের অস্ত্রশস্ত্র নিরীক্ষণ করতে তখনই তোমাকে আমি চিনেছিলাম, কিন্তু তুমি ব্রাহ্মণবেশী অতিথি হয়ে আমাদের প্রিয়কার্য করতে এজন্য বিনা অপরাধে তোমাকে বধ করি নি। তুমি এখন কালসূত্রে বন্ধ মৎস্যের ন্যায় দ্রৌপদীরূপ বড়িশ গ্রাস করেছ। বক আর হিড়িম্ব রাক্ষস যেখানে গেছে তুমিও সেখানে যাবে। জটাসুর যুধিষ্ঠিরাদিকে ছেড়ে দিয়ে ভীমকে বললে, তুমি যেসব রাক্ষস বধ করেছ আজ তোমার রক্তে তাদের তর্পণ করব।

 ভীম ও জটাসুরের দারুণ বাহুযুদ্ধ হ’তে লাগল। নকুল-সহদেব সাহায্য করতে এলে ভীম তাঁদের নিরস্ত ক’রে সহাস্যে বললেন, আমি একে মারতে পারব, তোমরা দাঁড়িয়ে দেখ। ভীমের মুষ্টির আঘাতে রাক্ষস ক্রমশ শ্রান্ত হয়ে পড়ল, তখন ভীম তার সর্বাঙ্গ নিষ্পিষ্ট করে চূর্ণ ক’রে দিলেন, বৃন্তচ্যুত ফলের ন্যায় তার মস্তক ছিন্ন হয়ে ভূপতিত হ’ল।


॥ যক্ষযুদ্ধপর্বাধ্যায়॥

৩৫। ভীমের সহিত যক্ষরাক্ষসাদির যুদ্ধ

 বদরিকাশ্রমে বাস কালে একদিন যুধিষ্ঠির বললেন, আমাদের বনবাসকালের চার বৎসর নিরাপদে অতীত হয়েছে। অস্ত্রশিক্ষার জন্য সুরলোকে যাবার সময় অর্জুন বলেছিলেন যে পঞ্চম বৎসর প্রায় পূর্ণ হ’লে তিনি কৈলাস পর্বতে আমাদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হবেন। অতএব আমরা কৈলাসে গিয়েই তাঁর প্রতীক্ষা করব।

 যুধিষ্ঠিরাদি, লোমশ ও অন্যান্য ব্রাহ্মণগণ এবং ঘটোৎকচ ও তাঁর অনুচরগণ সতর দিনে হিমালয়ের পৃষ্ঠদেশে উপস্থিত হলেন। তার পর তাঁরা গন্ধমাদন পর্বতের নিকটে রাজর্ষি বৃষপর্বার পবিত্র আশ্রমে এলেন। সেখানে সাত রাত্রি সুখে বাস করার পর অতিরিক্ত পরিচ্ছদ আভবণ ও যজ্ঞপাত্র বৃষপর্বার কাছে রেখে তাঁরা