পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২১১

॥ নিবাতকবচযুদ্ধপর্বাধ্যায়॥

৩৬। অর্জুনের প্রত্যাবর্তন — নিবাতকবচ ও হিরণ্যপুরের বৃত্তান্ত

 একমাস পরে একদিন পাণ্ডবগণ দেখলেন, আকাশ আলোকিত ক’রে ইন্দ্রের বিমান আসছে, মাতলি তা চালাচ্ছেন, ভিতরে কিরীটমাল্যধারী অর্জুন নব-আভরণে ভূষিত হয়ে ব’সে আছেন। বিমান থেকে নেমে অর্জুন পুরোহিত ধৌম্য, যুধিষ্ঠির ও ভীমের চরণবন্দনা করলেন। পাণ্ডবগণ কর্তৃক সৎকৃত হয়ে মাতলি বিমান নিয়ে ইন্দ্রলোকে ফিরে গেলেন।

 প্রিয়া দ্রৌপদীকে ইন্দ্রদত্ত বিবিধ মহামূল্য অলংকার উপহার দিয়ে অর্জুন তাঁর ভ্রাতা ও ব্রাহ্মণদের মধ্যে এসে বসলেন এবং সুরলোকে বাস ও অস্ত্রশিক্ষার বৃত্তান্ত সংক্ষেপে বললেন। পরদিন প্রভাতকারে উজ্জ্বল বিমানে আরোহণ করে ইন্দ্র পাণ্ডবদের নিকট উপস্থিত হয়ে বুধিষ্ঠিরকে বললেন, তুমি পৃথিবী শাসন করবে, এখন তোমরা কাম্যকবনে ফিরে যাও। অর্জুন সর্ববিধ অস্ত্র লাভ করেছেন, আমার প্রিয়কার্যও করেছেন। এখন ত্রিভুবনের লোকেও এঁকে জয় করতে পারবে না। ইন্দ্র চ’লে গেলে যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নের উত্তরে অর্জুন তাঁর যাত্রা ও সুরলোকবাসের ঘটনাবলী সবিস্তারে জানিয়ে নিবাতকবচবধের এই বৃত্তান্ত বললেন।—

  আমার অস্ত্রশিক্ষা সমাপ্ত হলে দেবরাজ বললেন, তোমার এখন গুরুদক্ষিণা দেবার সময় এসেছে। আমার শত্রু নিবাতকবচ নামক তিন কোটি দানব সমুদ্রমধ্যস্থ দুর্গে বাস করে, তারা রূপে ও বিক্রমে সমান। তুমি তাদের বধ কর, তা হ’লেই তোমার গুরুদক্ষিণা দেওয়া হবে।

 কিরীট-কবচে ভূষিত হয়ে গাণ্ডীবধনু নিয়ে আমি ইন্দ্রের রথে যাত্রা করলাম। অবিলম্বে মাতলি আমাকে সমুদ্রস্থ দানবনগরে নিয়ে এলেন। সহস্র সহস্র নিবাতকবচ নামক দানব লৌহময় মহাশূল গদা মূষল খড়্‌গ প্রভৃতি অস্ত্র নিয়ে বিকৃত বাদ্যধ্বনি ক’রে আমাকে আক্রমণ করলে। তুমুল যুদ্ধে অনেক দানব আমার অস্ত্রাঘাতে নিহত হ’ল। তার পর তারা মায়াবলে শিলা জল অগ্নি ও বায়ু বর্ষণ করতে লাগল, চতুর্দিক ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হ’ল। তখন আমি নিজের অস্ত্রমায়ায় দানবগণের মায়া নষ্ট করলাম। তারা অদৃশ্য হয়ে আকাশ থেকে শিলা বর্ষণ করতে লাগল, আমরা যেখানে ছিলাম সেই স্থান গুহার ন্যায় হয়ে গেল। তখন মাতলির উপদেশে আমি দেবরাজের প্রিয় ভীষণ বজ্র অস্ত্র নিক্ষেপ করলাম।