পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২১৫

গুণ থাকতে পারে; আর, এমন কাকেও দেখা যায় না যিনি সুখদুঃখের অতীত। যুধিষ্ঠির বললেন, যে শূদ্রে ওইসব লক্ষণ থাকে তিনি শূদ্র নন, ব্রাহ্মণ; যে ব্রাহ্মণে থাকে না তিনি ব্রাহ্মণ নন, তাঁকে শূদ্র বলাই উচিত। আর আপনি যাই মনে করুন, সুখদুঃখাতীত ব্রহ্ম আছেন এই আমার মত। সর্প বললে, যদি গুণানুসারেই ব্রাহ্মণ হয় তবে যে পর্যন্ত কেউ গুণযুক্ত না হয় সে পর্যন্ত সে জাতিতে ব্রাহ্মণ নয়। যুধিষ্ঠির বললেন, মহাসর্প, আমি মনে করি সকল বর্ণেই সংকরত্ব আছে, সেজন্য মানুষের জাতিনির্ণয় দুঃসাধ্য।

 যুধিষ্ঠিরের উত্তর শনে সর্প প্রীত হয়ে ভীমকে মুক্তি দিলে। তার পর তার সঙ্গে নানাবিধ দার্শনিক আলাপ ক’রে যুধিষ্ঠির বললেন, আপনি শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান, সর্বজ্ঞ, স্বর্গবাসীও ছিলেন, তবে আপনার এ দশা হ’ল কেন? সর্পরূপী নহুষ বললেন, আমি দেবলোকে অভিমানে মত্ত হয়ে বিমানে বিচরণ করতাম, ব্রহ্মর্ষি দেবতা গন্ধর্ব প্রভৃতি সকলেই আমাকে কর দিতেন। এক সহস্র ব্রহ্মর্ষি আমার শিবিকা বহন করতেন। একদিন অগস্ত্য যখন আমার বাহন ছিলেন তখন আমি পা দিয়ে তাঁর মস্তক স্পর্শ করি। তাঁর অভিশাপে আমি সর্প হয়ে অধোমুখে পতিত হলাম। তামার প্রার্থনায় তিনি বললেন, ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির তোমাকে শাপমুক্ত করবেন। এই কথা ব’লে নহুষ অজগরের রূপ ত্যাগ ক’রে দিব্যদেহে স্বর্গারোহণ করলেন। যুধিষ্ঠির ভীম ও ধৌম্য তাঁদের আশ্রমে ফিরে গেলেন।


॥ মার্কণ্ডেয়সমাস্যা[১]পর্বাধ্যায় ॥

৩৮। কৃষ্ণ ও মার্কণ্ডেয়র আগমন ― অরিষ্টনেমা ও অত্রির কথা

 বিশাখযূপ বনে বর্ষা ও শরৎ ঋতু কাটিয়ে পাণ্ডবগণ আবার কাম্যকবনে এসে বাস করতে লাগলেন। একদিন সত্যভামাকে সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণ তাঁদের দেখতে এলেন। অর্জুনকে সুভদ্রা ও অভিমন্যুর কুশলসংবাদ দিয়ে কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে বললেন, যাজ্ঞসেনী, ভাগ্যক্রমে অর্জুন ফিরে এসেছেন, তোমার স্বজনবর্গ এখন পূর্ণ হ’ল। তোমার বালক পুত্রগণ ধনুর্বেদে অনুরক্ত ও সুশীল হয়েছে। তোমার পিতা ও ভ্রাতা নিমন্ত্রণ করলেও তারা মাতুলালয়ের ঐশ্বর্য ভোগ করতে চায় না, তারা দ্বারকাতেই সুখে আছে। আর্যা কুন্তী আর তুমি যেমন পার সেইরূপ সুভদ্রাও


  1. সমাস্যা—ধর্মতত্ত্ব, আখ্যান ইত্যাদি কথন ও শ্রবণের জন্য একত্র উপবেশন।