পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২১৭

তার অল্পমাত্র আপনাদের বললাম। আপনারা এখন ফিরে যান, পাপের ভয় করবেন না। রাজারা হৃষ্ট হয়ে অরিষ্টনেমাকে প্রণাম করে চ’লে গেলেন।

 তার পর মার্কণ্ডেয় এই উপাখ্যান বললেন।—মহর্ষি অত্রি বনগমনের ইচ্ছা করলে তাঁর ভার্যা বললেন, রাজর্ষি বৈণ্য অশ্বমেধ যজ্ঞ করছেন, তুমি তাঁর কাছে প্রার্থনা ক’রে প্রচুর ধন নিয়ে এস, এবং সেই ধন পুত্র ও ভৃত্যদের ভাগ করে দিয়ে যেখানে ইচ্ছা হয় যেয়ো। অত্রি সম্মত হয়ে বৈণ্য রাজার কাছে গিয়ে তাঁর এই স্তুতি করলেন— রাজা, আপনি ধন্য, প্রজাগণের নিয়ন্তা ও পৃথিবীর প্রথম নরপতি; মুনিরা বলেন, আপনি ভিন্ন আর কেউ ধর্মজ্ঞ নেই। এই স্তুতি শনে গৌতম ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, অত্রি, এমন কথা আর বলো না, ইন্দ্রই রাজাদের মধ্যে প্রথম। তুমি মূঢ় অপরিণতবুদ্ধি, রাজাকে তুষ্ট করবার জন্য স্তুতি করছ। অত্রি ও গৌতম কলহ করছেন দেখে সভাস্থ ব্রাহ্মণগণ দুজনকে ধর্মজ্ঞ সনৎকুমারের কাছে নিয়ে গেলেন। সনৎকুমার বললেন, রাজাকে ধর্ম ও প্রজাপতি বলা হয়, তিনিই ইন্দ্র ধাতা প্রজাপতি বিরাট প্রভৃতি নামে স্তুত হন, সকলেই তাঁর অর্চনা করে। অত্রি রাজাকে যে প্রথম বা প্রধান বলেছেন তা শাস্ত্রসম্মত। বিচারে অত্রিকে জয়ী দেখে বৈণ্য রাজা প্রীত হয়ে তাঁকে বহু ধন দান করলেন।

৩৯। বৈবস্বত মনু ও মৎস্য ― বালকরূপী নারায়ণ

 যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে মার্কণ্ডেয় বৈবস্বত মনুর এই বৃত্তান্ত বললেন।― বিবস্বানের (সূর্যের) পুত্র মনু রাজ্যলাভের পর বদরিকাশ্রমে গিয়ে দশ হাজার বৎসর কঠোর তপস্যা করেছিলেন। একদিন একটি ক্ষুদ্র মৎস্য চারিণী নদীর তীরে এসে মনুকে বললে, বলবান মৎস্যদের আক্রমণ থেকে আমাকে রক্ষা করুন। মনু সেই মৎস্যটিকে একটি জালার মধ্যে রাখলেন। ক্রমশ সে বড় হ’ল, তখন মনু তাকে একটি বিশাল পুষ্করিণীতে রাখলেন। কালক্রমে মৎস্য এত বড় হ’ল যে সেখানেও তার স্থান হ’ল না, তখন মনু তাকে গঙ্গায় ছেড়ে দিলেন। কিছুকাল পরে মৎস্য বললে, প্রভু, আমি অতি বৃহৎ হয়েছি, গঙ্গায় নড়তে পারছি না, আমাকে সমুদ্রে ছেড়ে দিন। মনু যখন তাকে সমুদ্রে ফেললেন তখন সে সহাস্যে বললে, ভগবান, আপনি আমাকে সর্বত্র রক্ষা করেছেন, এখন আপনার যা কর্তব্য তা শুনুন।― প্রলয়কাল আসন্ন, স্থাবর জঙ্গম সমস্তই জলমগ্ন হবে। আপনি রজ্জুযুক্ত একটি দৃঢ় নৌকা প্রস্তুত করিয়ে সপ্তর্ষিদের সঙ্গে তাতে উঠবেন, এবং পূর্বে ব্রাহ্মণগণ