পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৮
মহাভারত

যেসকল বীজের কথা বলেছেন তাও তাতে রাখবেন। আপনি সেই নৌকায় থেকে আমার প্রতীক্ষা করবেন, আমি শৃঙ্গ ধারণ ক’রে আপনার কাছে আসব। মৎস্যের উপদেশ অনুসারে মনু মহাসমুদ্রে নৌকায় উঠলেন। তিনি স্মরণ করলে মৎস্য উপস্থিত হ’ল। মনু তার শৃঙ্গে রজ্জু বাঁধলেন, মৎস্য গর্জমান ঊর্মিময় লবণাম্বুর উপর দিয়ে মহাবেগে নৌকা টেনে নিয়ে চলল। তখন পৃথিবী আকাশ ও সর্বদিক সমস্তই জলময়, কেবল সাতজন ঋষি, মনু আর মৎস্যকে দেখা যাচ্ছিল। বহু বর্ষ পরে হিমালয়ের নিকটে এসে মনু মৎস্যের উপদেশ অনুসারে পর্বতের মহাশৃঙ্গে নৌকা বাঁধলেন। সেই শৃঙ্গ এখনও ‘নৌবন্ধন’ নামে খ্যাত। তার পর মৎস্য ঋষিগণকে বললে, আমি প্রজাপতি ব্রহ্মা, আমার উপরে কেউ নেই, আমি মৎস্যরূপে তোমাদের ভয়মক্ত করেছি। এই মনু দেবাসুর মানুষ প্রভৃতি সকল প্রজা ও স্থাবর জঙ্গম সৃষ্টি করবেন। এই ব’লে মৎস্য অন্তর্হিত হ’ল। তার পর মনু কঠোর তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করে সকল প্রজা সৃষ্টি করতে লাগলেন।


 যুধিষ্ঠির বললেন, আপনি পুরাকালের সমস্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, তার সম্বন্ধে কিছু শুনতে ইচ্ছা করি। মার্কণ্ডেয় বললেন, সত্যযযুগের পরিমাণ চার হাজার বৎসর[১], তার সন্ধ্যা[২] চার শ, এবং সন্ধ্যাংশ[৩]ও চার শ বৎসর। ত্রেতাযুগ তিন হাজার বৎসর, তার সন্ধ্যা তিন শ বৎসর, সন্ধ্যাংশও তাই। দ্বাপরযুগে দু হাজার বৎসর, সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ দুইই দু শ বৎসর। কলিযুগ এক হাজার বৎসর, সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ এক-এক শ বৎসর। চার যুগে বার হাজার বৎসর; এক হাজার যুগে (এক হাজার চতুর্যুগে) ব্রহ্মার এক দিন। তার পর ব্রহ্মার রাত্রি প্রলয়কাল। একদা প্রলয়কালে আমি নিরাশ্রয় হয়ে সমুদ্রজলে ভাসছিলাম এমন সময়ে দেখলাম, এক বিশাল বটবৃক্ষের শাখার তলে দিব্য-আস্তরণযুক্ত পর্যঙ্কে একটি চন্দ্রবদন পদ্মলোচন বালক শুয়ে আছে, তার বর্ণ অতসী[৪] পুষ্পের ন্যায়, বক্ষে শ্রীবৎসচিহ্ণবিষ্ণুর বক্ষের রোমাবর্ত॥ সেই বালক বললেন, বৎস মার্কণ্ডেয়, তুমি পরিশ্রান্ত হয়েছ, আমার শরীরের ভিতরে বাস কর। এই বলে তিনি মুখব্যাদান করলেন। আমি তাঁর উদরে প্রবেশ করে দেখলাম, নগর রাষ্ট্র পর্বত নদী সাগর আকাশ চন্দ্রসূর্য দেবগণ অসুরগণ প্রভৃতি


  1. অনেকে বৎসরের অর্থ করেন দৈব বৎসর, অর্থাৎ মানুষের ৩৬০ বৎসর।
  2. যে কালে যুগলক্ষণ ক্ষীণ হয়।
  3. যে কালে পরবর্তী যুগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
  4. অতসী বা তিসির ফুল নীলবর্ণ।