পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপৰ্ব
২১৯

সমেত সমগ্র জগৎ সেখানে রয়েছে। এক শত বৎসরের অধিক কাল তাঁহার দেহের মধ্যে বিচরণ ক’রে কোথাও অন্ত পেলাম না, তখন আমি সেই বরেণ্য দেবের শরণ নিলাম এবং সহসা তাঁর বিবৃত মুখ থেকে বায়ুবেগে নির্গত হলাম। বাইরে এসে দেখলাম, সেই পীতবাস দ্যুতিমান বালক বটবৃক্ষের শাখায় ব’সে আছেন। তিনি সহাস্যে বললেন, মার্কণ্ডেয়, তুমি আমার শরীরে সুখে বাস করেছ তো? আমি নবদৃষ্টি লাভ ক’রে মোহমুক্ত হয়ে তাঁর সুন্দর কোমল আরক্ত চরণদ্বয় মস্তকে ধারণ করলাম। তার পর কৃতাঞ্জলি হয়ে বললাম, দেব, তোমাকে আর তোমার মায়াকে জানতে ইচ্ছা করি। সেই দেব বললেন, পুরাকালে আমি জলের নাম ‘নারা’ দিয়েছিলাম, প্রলয়কালে সেই জলই আমার অয়ন বা আশ্রয় সেজন্য আমি নারায়ণ। আমি তোমার উপর পরিতুষ্ট হয়ে ব্রহ্মার রূপ ধারণ করে অনেক বার তোমাকে বর দিয়েছি। লোকপিতামহ ব্রহ্মা আমার শরীরের অর্ধাংশ। যত কাল তিনি জাগরিত না হন তত কাল আমি শিশুরূপে এইখানে থাকি। প্রলয়ান্তে ব্রহ্মা জাগরিত হ’লে আমি তাঁর সঙ্গে একীভূত হয়ে আকাশ পৃথিবী স্থাবর জঙ্গম প্রভৃতি সৃষ্টি করব। তত কাল তুমি সুখে এখানে বাস কর। এই বলে তিনি অন্তর্হিত হলেন।

 এই ইতিহাস শেষ ক’রে মার্কণ্ডেয় যুধিষ্ঠিরকে বললেন, মহারাজ, সেই প্রলয়কালে আমি যে পদ্মলোচন আশ্চর্য দেবকে দেখেছিলাম তিনিই তোমার এই আত্মীয় জনার্দন। এঁর বরে আমার স্মৃতি নষ্ট হয় না, আমি দীর্ঘায়ু, ইচ্ছামৃত্যু হয়েছি। এই অচিন্ত্যস্বভাব মহাবাহু কৃষ্ণ যেন ক্রীড়ায় নিরত আছেন। তোমরা এঁর শরণ নাও। মার্কণ্ডেয় এইরূপ বললে পাণ্ডবগণ ও দ্রৌপদী জনার্দন কৃষ্ণকে নমস্কার করলেন।

৪০। পরীক্ষিৎ ও মণ্ডূকরাজকন্যা ― শল, দল ও বামদেব

 যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে মার্কণ্ডেয় ব্রাহ্মণমাহাত্ম্য-বিষয়ক আরও উপাখ্যান বললেন।—অযোধ্যায় পরীক্ষিৎ নামে ইক্ষ্বাকুবংশীয় এক রাজা ছিলেন। একদিন তিনি অশ্বারোহণে মৃগয়ায় গিয়ে ক্ষুধাতৃষ্ণায় কাতর হয়ে নিবিড় বনে এক সরোবর দেখতে পেলেন। রাজা স্নান ক’রে অশ্বকে মৃণাল খেতে দিয়ে সরোবরের তীরে বসলেন। তিনি দেখলেন, এক পরমসুন্দরী কন্যা ফুল তুলতে তুলতে গান করছে। রাজা বললেন, ভদ্রে, তুমি কে? আমি তোমার পাণিপ্রার্থী। কন্যা বললে, আমি