পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২০
মহাভারত

কন্যা; যদি প্রতিজ্ঞা কর যে আমাকে কখনও জল দেখাবে না তবেই বিবাহ হ’তে পারে। রাজা সম্মত হলেন এবং কন্যাকে বিবাহ ক’রে রাজধানীতে নিয়ে গেলেন। তিনি পত্নীর সঙ্গে নির্জন স্থানে বাস করতে লাগলেন।

 পরিচারিকাদের কাছে কন্যার বৃত্তান্ত শুনে রাজমন্ত্রী বহুবৃক্ষশোভিত এক উদ্যান রচনা করলেন। সেই উদ্যানের এক পার্শ্বে একটি পুষ্করিণী ছিল, তার জল মুক্তাজাল দিয়ে এবং পাড় চুনের লেপে ঢাকা। মন্ত্রী রাজাকে বললেন, এই মনোরম উদ্যানে জল নেই, আপনি এখানে বিহার করুন। রাজা তাঁর মহিষীর সঙ্গে সেখানে বাস করতে লাগলেন। একদিন তাঁরা বেড়াতে বেড়াতে শ্রান্ত হয়ে সেই পুষ্করিণীর তীরে এলেন। রাজা রানীকে বললেন, তুমি জলে নাম। রানী জলে নিমগ্ন হলেন, আর উঠলেন না। রাজা তখন সেই পুষ্করিণী জলশূন্য করালেন এবং তার মধ্যে একটা ব্যাং দেখে আজ্ঞা দিলেন, সমস্ত মণ্ডূক বধ কর। মণ্ডূকরাজ তপস্বীর বেশে রাজার কাছে এসে বললেন, মহারাজ, বিনা দোষে ভেক বধ করবেন না। রাজা বললেন, এই দুরাত্মারা আমার প্রিয়াকে খেয়ে ফেলেছে। মণ্ডূকরাজ নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আমার নাম আয়ু, আপনার ভার্যা আমার কন্যা সুশোভনা। তার এই দুষ্ট স্বভাব— সে অনেক রাজাকে প্রতারণা করেছে। রাজার প্রার্থনায় আয়ু তাঁর কন্যাকে এনে দিলেন এবং তাকে অভিশাপ দিলেন, তোমার অপরাধের ফলে তোমার সন্তান ব্রাহ্মণের অনিষ্টকারী হবে।

 সুশোভনার গর্ভে পরীক্ষিতের তিন পুত্র হ’ল — শল, দল, বল। যথাকালে শলকে রাজ্যে অভিষিক্ত করে পরীক্ষিৎ বনে চ’লে গেলেন। একদিন শল রথে চ’ড়ে মৃগয়ায় গিয়ে একটি দ্রুতগামী হরিণকে ধরতে পারলেন না। সারথি বললে, এই রথে যদি বামী নামক দুই অশ্ব জোতা হয় তবেই মৃগকে ধরতে পারবেন। মহর্ষি বামদেবের সেই অশ্ব আছে জেনে রাজা তাঁর আশ্রমে গিয়ে অশ্ব প্রার্থনা করলেন। বামদেব বললেন, নিয়ে যাও, কিন্তু কৃতকার্য হ’লেই শীঘ্র ফিরিয়ে দিও। রাজা সেই দুই অশ্ব রথে যোজনা ক’রে হরিণ ধরলেন, কিন্তু রাজধানীতে গিয়ে অশ্ব ফেরত পাঠালেন না। বামদেব তাঁর শিষ্য আত্রেয়কে রাজার কাছে পাঠালে রাজা বললেন, এই দুই অশ্ব রাজারই যোগ্য, ব্রাহ্মণের অশ্বে কি প্রয়োজন? তার পর বামদেব স্বয়ং এসে অশ্ব চাইলেন। রাজা বললেন মহর্ষি, সুশিক্ষিত বৃষই ব্রাহ্মণের উপযুক্ত বাহন; আর, বেদও তো আপনাদের বহন করে। শল রাজা যখন কিছুতেই দুই অশ্ব ফেরত দিলেন না তখন বামদেবের আদেশে চারজন ঘোররূপ