পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২২১

রাক্ষস আবির্ভূত হয়ে শূলহস্তে রাজাকে মারতে গেল। রাজা উচ্চস্বরে বললেন, ইক্ষ্বাকুবংশীয়গণ, আমার ভ্রাতা দল এবং সভাস্থ বৈশ্যগণ যদি আমার অনুবর্তী হন তবে এই রাক্ষসদের নিবারণ করুন; বামদেব ধর্মশীল নন, তাঁর বামী আমি দেব না। এইরূপ বলতে বলতে শল রাক্ষসদের হাতে নিহত হলেন।

 ইক্ষ্বাকুবংশীয়গণ দলকে রাজপদে অভিষিক্ত করলেন। বামদেব তাঁর কাছে অশ্ব চাইলে দল ব্রুদ্ধ হয়ে তাঁর সারথিকে বললেন, আমার যে বিষলিপ্ত বিচিত্র বাণ আছে তারই একটা নিয়ে এস, বামদেবকে মারব, তার মাংস কুকুররা খাবে। বামদেব বললেন, রাজা, সেনজিৎ নামে তোমার যে দশবৎসরবয়স্ক পুত্র আছে তাকেই তোমার বাণ বধ করুক। দলের বাণ অন্তঃপুরে গিয়ে রাজপুত্রকে বধ করলে। রাজা আর একটা বাণ আনতে বললেন, কিন্তু তাঁর হাত বামদেবের শাপে অবশ হয়ে গেল। রাজা বললেন, সকলে দেখুন, বামদেব আমাকে স্তম্ভিত করেছেন, আমি তাঁকে শরাঘাতে মারতে পারছি না, অতএব তিনি দীর্ঘায়ু হয়ে জীবিত থাকুন। বামদেব বললেন, রাজা, তোমার মহিষীকে বাণ দিয়ে স্পর্শ কর, তা হ’লে পাপমুক্ত হবে। রাজা দল তা করলে মহিষী বললেন, এই নৃশংস রাজাকে আমি প্রতিদিন সদুপদেশ দিই, ব্রাহ্মণগণকেও সত্য ও প্রিয় বাক্য বলি, তার ফলে আমি পুণ্যলোক লাভ করব। মহিষীর উপর তুষ্ট হয়ে বামদেব বর দিলেন, তার ফলে দল পাপমুক্ত হয়ে শুভাশীর্বাদ লাভ করলেন এবং অশ্ব ফিরিয়ে দিলেন।

৪১। দীর্ঘায়ু বক ঋষি — শিবি ও সুহোত্র — যযাতির দান

 তার পর মার্কণ্ডেয় ইন্দ্রসখা দীর্ঘায়ু, বক ঋষির এই উপাখ্যান বললেন।— দেবাসুরযুদ্ধের পর ইন্দ্র ত্রিলোকের অধিপতি হয়ে নানাস্থানে বিচরণ করতে করতে পূর্বসমুদ্রের নিকটে বক ঋষির আশ্রমে উপস্থিত হলেন। বক পাদ্য অর্ঘ্য আসনাদি নিবেদন করলে ইন্দ্র বললেন, আপনার লক্ষ বৎসর বয়স হয়েছে; চিরজীবীদের কি দুঃখ তা আমাকে বলুন। বক বললেন, অপ্রিয় লোকের সঙ্গে বাস, প্রিয় লোকের বিরহ, অসাধু লোকের সঙ্গে মিলন, পত্র-দারাদির বিনাশ, পরাধীনতার কষ্ট ধনহীনতার জন্য অবমাননা, অকুলীনের কুলমর্যাদা, কুলীনের কুলক্ষয়— চিরজীবীদের এইসব দেখতে হয়, এর চেয়ে অধিক দুঃখ আর কি আছে? ইন্দ্র আবার প্রশ্ন করলেন, চিরজীবীদের সুখ কি তা বলুন। বক উত্তর দিলেন, কুমিত্রকে আশ্রয় না ক’রে দিবসের অষ্টম বা দ্বাদশ ভাগে শাক ভক্ষণ — এর চেয়ে সুখতর কি আছে?