পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৬
মহাভারত

 ইক্ষ্বাকুর পর যথাক্রমে শশাদ কুকুৎস্থ অনেশ পৃথু বিষ্বগশ্ব অদ্রি যুবনাশ্ব শ্রাব শ্রাবস্তক (যিনি শ্রাবস্তী নগরী নির্মাণ করেছিলেন) ও বৃহদশ্ব অযোধ্যার রাজা হন। তাঁর পত্র কুবলাশ্ব। বৃহদশ্ব বনে যেতে চাইলে মহর্ষি উতঙ্ক তাঁকে বারণ ক’রে বললেন, আপনি রাজ্যরক্ষা ও প্রজাপালন করুন, তার তুল্য ধর্মকার্য অরণ্যে হতে পারে না। আমার আশ্রমের নিকটে মরুপ্রদেশে উজ্জ্বালক নামে এক বালুকাপপূর্ণ সমুদ্র আছে, সেখানে মধু-কৈটভের পুত্র ধুন্ধু নামে এক মহাবল দানব ভূমির ভিতরে বাস করে। আপনি তাকে বধ ক’রে অক্ষয় কীর্তি লাভ করুন, তার পর বনে যাবেন। বালুকার মধ্যে নিদ্রিত এই দানব যখন বৎসরান্তে নিঃশ্বাস ফেলে তখন সপ্তাহকাল ভূকম্প হয়, সূর্যের মার্গ পর্যন্ত ধূলি ওড়ে, স্ফুলিঙ্গ অগ্নিশিখা ও ধূম নির্গত হয়। রাজর্ষি বৃহদশ্ব কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, ভগবান, আমার পুত্র কুবলাশ্ব তার বীর পুত্রদের সঙ্গে আপনার প্রিয়কার্য করবে, আমাকে বনে যেতে দিন। উতঙ্ক তথাস্তু বলে তপোবনে চ’লে গেলেন।

 প্রলয়সমুদ্রে বিষ্ণু যখন অনন্ত নাগের দেহের উপর যোগনিদ্রায় মগ্ন ছিলেন তখন তাঁর নাভি হতে নির্গত পদ্মে ব্রহ্মা উৎপন্ন হয়েছিলেন। মধু ও কৈটভ নামে দুই দানব ব্রহ্মাকে সন্ত্রস্ত করলে। তখন ব্রহ্মা পদ্মনাল কম্পিত ক’রে বিষ্ণুকে জাগরিত করলেন। বিষ্ণুউ দুই দানবকে স্বাগত জানালেন। তারা হাস্য ক’রে বললে, তুমি আমাদের নিকট বর চাও। বিষ্ণু বললেন, লোকহিতের জন্য আমি এই বর চাচ্ছি—তোমরা আমার বধ্য হও। মধু-কৈটভ বললে, আমরা কখনও মিথ্যা বলি না, রূপ শৌর্য ধর্ম তপস্যা দান সদাচার প্রভৃতিতে আমাদের তুল্য কেউ নেই। তুমি অনাবৃত স্থানে আমাদের বধ কর এবং এই বর দাও যেন আমরা তোমার পুত্র হই। বিষ্ণু বললেন, তাই হবে। পৃথিবী ও স্বর্গে কোথাও অনাবৃত স্থান না দেখে বিষ্ণু তাঁর অনাবৃত ঊরুর উপরে মধু ও কৈটভের মস্তক সুদর্শন চক্রে কেটে ফেললেন।

 মধু-কৈটভের পুত্র ধন্ধু তপস্যা ক’রে ব্রহ্মার বরে দেব দানব যক্ষ গন্ধর্ব নাগ ও রাক্ষসের অবধ্য হয়েছিল। সে বালুকার মধ্যে লুকিয়ে থেকে উতঙ্কের আশ্রমে উপদ্রব করত। উতঙ্কের অনুরোধে বিষ্ণু কুবলাশ্ব রাজার দেহে প্রবেশ করলেন। কুবলাশ্ব তাঁর একুশ হাজার পুত্র ও সৈন্য নিয়ে ধুন্ধুবধের জন্য যাত্রা করলেন। সপ্তাহকাল বালকাসমুদ্রের সর্বদিক খনন করার পর নিদ্রিত ধুন্ধুকে দেখা গেল। সে গাত্রোত্থান করে তার মুখনির্গত অগ্নিতে কুবলাশ্বের পুউত্রদের দগ্ধ ক’রে ফেললে। কুবলাশ্ব যোগশক্তির প্রভাবে ধুন্ধুর মুখাগ্নি