পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২২৭

নির্বাপিত করলেন এবং ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ ক’রে তাকে দগ্ধ ক’রে বধ করলেন। সেই অবধি তিনি ধুন্ধুমার নামে খ্যাত হলেন।

৪৪। কৌশিক, পতিব্রতা ও ধর্মব্যাধ

 যুধিষ্ঠির বললেন, ভগবান, আপনি নারীর শ্রেষ্ঠ মাহাত্ম্য এবং সূক্ষ্ম ধর্ম সম্বন্ধে বলুন। মার্কণ্ডেয় বললেন, আমি পতিব্রতার ধর্ম বলছি শোন।— কৌশিক নামে এক তপস্বী ব্রাহ্মণ ছিলেন। একদিন তিনি বৃক্ষমূলে ব’সে বেদপাঠ করছিলেন এমন সময়ে এক বলাকা (স্ত্রী-বক) তাঁর মাথার উপরে মলত্যাগ করলে। কৌশিক ক্রুদ্ধ হয়ে তার দিকে চাইলেন, বলাকা তখনই ম’রে পড়ে গেল। তাকে ভূপতিত দেখে ব্রাহ্মণ অনুতপ্ত হয়ে ভাবলেন, আমি ক্রোধের বশে অকার্য ক’রে ফেলেছি।

 তার পর কৌশিক ভিক্ষার জন্য গ্রামে গিয়ে একটি পূর্বপরিচিত গৃহে প্রবেশ ক’রে বললেন, ভিক্ষা দাও। তাঁকে অপেক্ষা করতে ব’লে গৃহিণী ভিক্ষাপাত্র পরিষ্কার করতে গেলেন। এমন সময়ে গৃহস্বামী ক্ষুধার্ত হয়ে গৃহে এলেন, সাধ্বী গৃহিণী তখন ব্রাহ্মণকে ছেড়ে পা আর মুখ ধোবার জল, আসন ও খাদ্যপানীয় দিয়ে স্বামীর সেবা করতে লাগলেন। তার পর তিনি ভিক্ষার্থী ব্রাহ্মণকে স্মরণ করে লজ্জিত হয়ে তাঁকে ভিক্ষা দিতে গেলেন। কৌশিক ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, এর অর্থ কি? তুমি আমাকে অপেক্ষা করতে ব’লে আটকে রাখলে কেন? সাধ্বী গৃহিণী বললেন, আমাকে ক্ষমা করুন, আমার স্বামী পরমদেবতা, তিনি শ্রান্ত ও ক্ষুধিত হয়ে এসেছেন সেজন্য তাঁর সেবা আগে করেছি। কৌশিক বললেন, তুমি স্বামীকেই শ্রেষ্ঠ জ্ঞান ক’রে ব্রাহ্মণকে অপমান করলে। ইন্দ্রও ব্রাহ্মণের নিকট প্রণত থাকেন। তুমি কি জান না যে, ব্রাহ্মণ পৃথিবী দগ্ধ করতে পারেন?

 গৃহিণী বললেন, ক্রোধ ত্যাগ করুন, আমি বলাকা নই, ক্রুদ্ধ দৃষ্টি দিয়ে আপনি আমার কি করবেন? আমি আপনাকে অবজ্ঞা করি নি, ব্রাহ্মণদের তেজ ও মাহাত্ম্য আমার জানা আছে, তাঁদের ক্রোধ যেমন বিপুল, অনুগ্রহও সেইরূপ। আপনি আমার ত্রুটি ক্ষমা করুন। পতিসেবাই আমি শ্রেষ্ঠ ধর্ম মনে করি, তার ফল আমি কি পেয়েছি দেখুন— আপনি ক্রুদ্ধ হয়ে বলাকাকে দগ্ধ করেছেন তা আমি জানতে পেরেছি। দ্বিজোত্তম, ক্রোধ মানুষের শরীরস্থ শত্রু, যিনি ক্রোধ ও মোহ ত্যাগ করেছেন দেবতারা তাঁকেই ব্রাহ্মণ মনে করেন। আপনি ধর্মজ্ঞ, কিন্তু ধর্মের যথার্থ তত্ত্ব জানেন না। মিথিলায় এক ব্যাধ আছেন, তিনি পিতা-মাতার