পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২২৯

আপনার শোকে তাঁরা অন্ধ হয়ে গেছেন, আপনি শীঘ্র গিয়ে তাঁদের প্রসন্ন করুন।

 কৌশিক বললেন, আমি নরকে পতিত হচ্ছিলাম, তুমি আমাকে উদ্ধার করলে। তোমার উপদেশ অনুসারে আমি মাতা-পিতার সেবা করব। তোমাকে আমি শূদ্র মনে করি না, কোন্ কর্মের ফলে তোমার এই দশা হয়েছে? ধর্মব্যাধ বললেন, পূর্বজন্মে আমি বেদাধ্যয়ী ব্রাহ্মণ ও এক রাজার সখা ছিলাম। তাঁর সঙ্গে মৃগয়ায় গিয়ে আমি মৃগ মনে ক’রে এক ঋষিকে বাণবিদ্ধ করি। তাঁর অভিশাপে আমি ব্যাধ হয়ে জন্মেছি। আমার প্রার্থনায় তিনি বললেন, তুমি শূদ্রযোনিতে জন্মগ্রহণ ক’রেও ধর্মজ্ঞ জাতিস্মর ও মাতা-পিতার সেবাপরায়ণ হবে, শাপক্ষয় হ’লে আবার ব্রাহ্মণ হবে। তার পর আমি সেই ঋষির দেহ থেকে শর তুলে ফেলে তাঁকে তাঁর আশ্রমে নিয়ে গেলাম। তিনি মরেন নি।

 ধর্মব্যাধকে প্রদক্ষিণ করে কৌশিক তাঁর আশ্রমে ফিরে গেলেন এবং মাতাপিতার সেবায় নিরত হলেন।

৪৫। দেবসেনা ও কার্তিকেয়

 মার্কণ্ডেয় বললেন, আমি এখন অগ্নিপুত্র কার্তিকেয়র কথা বলছি তোমরা শোন।— দেবগণের সহিত যুদ্ধে দানবগণ সর্বদাই জয়ী হয় দেখে দেবরাজ ইন্দ্র একজন সেনাপতির অনুসন্ধান করতে লাগলেন। একদিন তিনি মানস পর্বতে স্ত্রীকণ্ঠের আর্তনাদ শুনে কাছে গিয়ে দেখলেন, কেশী দানব একটি কন্যার হাত ধ’রে আছে। ইন্দ্রকে দানব বললে, এই কন্যাকে আমি বিবাহ করব, তুমি বাধা দিও না, চ’লে যাও। তখন কেশীর সঙ্গে ইন্দ্রের যুদ্ধ হ’ল, কেশী পরাস্ত হয়ে পালিয়ে গেল। কন্যা ইন্দ্রকে বললেন, আমি প্রজাপতির কন্যা দেবসেনা, আমার ভগিনী দৈত্যসেনাকে কেশী হরণ করেছে। আপনার নির্দেশে আমি অজেয় পতি লাভ করতে ইচ্ছা করি। ইন্দ্র বললেন, তুমি আমার মাতৃষ্বসার কন্যা। এই ব’লে ইন্দ্র দেবসেনাকে ব্রহ্মার কাছে নিয়ে গেলেন। ব্রহ্মা বললেন, এক মহাবিক্রমশালী পুরুষ জন্মগ্রহণ করে এই কন্যার পতি হবেন, তিনি তোমার সেনাপতিও হবেন।

 ইন্দ্র দেবসেনাকে বশিষ্ঠাদি সপ্তর্ষির যজ্ঞস্থানে নিয়ে গেলেন। সেখানে অগ্নিদেব হোমকুণ্ড থেকে উঠে দেখলেন, অপূর্বসুন্দরী ঋষিপত্নীগণ কেউ আসনে