পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৪
মহাভারত

বলরাম প্রভৃতি সকলেই তাদের ভালবাসেন। এই কথা ব’লে দ্রৌপদীকে প্রদক্ষিণ ক’রে সত্যভামা রথে উঠলেন। যদুশ্রেষ্ঠ কৃষ্ণও মৃদু হাস্যে দ্রৌপদীকে সান্ত্বনা দিয়ে এবং পাণ্ডবগণের নিকট বিদায় নিয়ে পত্নীসহ প্রস্থান করলেন।


॥ ঘোষযাত্রাপবাধ্যায় ॥

৪৭। দুর্যোধনের ঘোষযাত্রা ও গন্ধর্বহস্তে নিগ্রহ

 মার্কণ্ডেয় প্রভৃতি চ’লে গেলে পাণ্ডবগণ দ্বৈতবনে সরোবরের নিকট গৃহ নির্মাণ করে বাস করতে লাগলেন। সেই সময়ে হস্তিনাপুরে একদিন শকুনি ও কর্ণ দুর্যোধনকে বললেন, রাজা, তুমি এখন শ্রীসম্পন্ন হয়ে রাজ্যভোগ করছ, আর পাণ্ডবরা শ্রীহীন রাজ্যচ্যুত হয়ে বনে বাস করছে। এখন একবার তাদের দেখে এস। পর্বতবাসী যেমন ভূতলবাসীকে দেখে, সমৃদ্ধিশালী লোকে সেইরূপ দুর্দশাপন্ন শত্রুকে দেখে, এর চেয়ে সুখজনক আর কিছুই নেই। তোমার পত্নীরাও বেশভূষায় সুসজ্জিত হয়ে মৃগচর্মধারিণী দীনা দ্রৌপদীকে দেখে আনে।

 দুর্যোধন বললেন, তোমরা আমার মনের মতন কথা বলেছ, কিন্তু বৃদ্ধ রাজা আমাদের যেতে দেবেন না। শকুনির সঙ্গে পরামর্শ ক’রে কর্ণ বললেন, গোপপল্লীর কাছে আমাদের গোপরা থাকে, তারা তোমার প্রতীক্ষা করছে। ঘোষযাত্রা[১] সর্বদাই কর্তব্য, ধৃতরাষ্ট্র তোমাকে অনুমতি দেবেন। এই কথার পর তিনজনে সহাস্যে হাতে হাত মেলালেন।

 কর্ণ ও শকুনি ধৃতরাষ্ট্রের কাছে গিয়ে বললেন, কুরুরাজ, আপনার গোপপল্লীর গরুদের গণনা আর বাছুরদের চিহ্নিত করবার সময় এসেছে, মৃগয়ারও এই সময়, অতএব আপনি দুর্যোধনকে যাবার অনুমতি দিন। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, মৃগয়া আর গরু দেখে আসা দুইই ভাল, কিন্তু শুনেছি গোপপল্লীর নিকটেই নরব্যাঘ্র পাণ্ডবরা বাস করেন, সেজন্য তোমাদের সেখানে যাওয়া উচিত নয়। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির তোমাদের দেখলে ক্রুদ্ধ হবেন না, কিন্তু ভীম অসহিষ্ণু আর যাজ্ঞসেনী তো মূর্তিমতী তেজ। তোমরা দর্প ও মোহের বশে অপরাধ করবে, তার ফলে

  1. ঘোষ—গোপপল্লী বা বাথান যেখানে অনেক গরু রাখা হয়।