পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২৩৯

ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ প্রভৃতির দেহে প্রবেশ করবেন, তার ফলে ভীষ্মাদি দয়া ত্যাগ ক’রে তোমার শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন, পুত্র ভ্রাতা বন্ধু শিষ্য কাকেও নিষ্কৃতি দেবেন না। নিহত নরকাসুরের আত্মা কর্ণের দেহে অধিষ্ঠান ক’রে কৃষ্ণ ও অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন। আমরা সংশপ্তক নামে বহু সহস্র দৈত্য ও রাক্ষস নিযুক্ত করেছি, তারা অর্জুনকে বধ করবে। তুমি শত্রুহীন হয়ে পৃথিবী ভোগ করবে, অতএব শোক ত্যাগ করে স্বগৃহে যাও। তুমি আমাদের আর পাণ্ডবগণ দেবতাদের অবলম্বন।

 দানবগণ দুর্যোধনকে প্রিয়বাক্যে আশ্বাস দিয়ে আলিঙ্গন করলে। কৃত্যা তাঁকে পূর্বস্থানে রেখে এল। এইরূপ স্বপ্নদর্শনের পর দুর্যোধনের দৃঢ়বিশ্বাস হ’ল যে পাণ্ডবগণ যুদ্ধে পরাজিত হবেন। তিনি স্বপ্নের বৃত্তান্ত প্রকাশ করলেন না। রাত্রিশেষে কর্ণ কৃতাঞ্জলি হয়ে সহাস্যে তাঁকে বললেন, রাজা, ওঠ, মরলে শত্রুজয় করা যায় না, জীবিত থাকলেই শুভ হয়। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যুদ্ধে অর্জুনকে বধ করব। তার পর দুর্যোধন সদলে হস্তিনাপুরে ফিরে গেলেন।

৪৯। দুর্যোধনের বৈষ্ণব যজ্ঞ

 দুর্যোধন ফিরে এলে ভীষ্ম তাঁকে বললেন, বৎস, আমার অমত সত্ত্বেও তুমি দ্বৈতবনে গিয়েছিলে। গন্ধর্বরা তোমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, অবশেষে পাণ্ডবরা তোমাকে মুক্ত করলেন। সূতপুত্র কর্ণ ভয় পেয়ে রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গেলেন। মহাত্মা পাণ্ডবদের আর দুর্মতি কর্ণের বিক্রম তুমি দেখেছ, এখন বংশের মঙ্গলার্থে পাণ্ডবদের সঙ্গে সন্ধি কর। দুর্যোধন হেসে শকুনির সঙ্গে উঠে গেলেন। ভীষ্ম লজ্জিত হয়ে নিজের ভবনে প্রস্থান করলেন।

 দুর্যোধন কর্ণকে বললেন, পাণ্ডবদের ন্যায় আমিও রাজসূয় যজ্ঞ করতে ইচ্ছা করি। কর্ণ প্রভৃতি সোৎসাহে এই প্রস্তাবের সমর্থন করলেন, কিন্তু পুরোহিত দুর্যোধনকে বললেন, তোমার পিতা আর যুধিষ্ঠির জীবিত থাকতে তোমাদের বংশে আর কেউ এই যজ্ঞ করতে পারেন না। তবে আর একটি মহাযজ্ঞ আছে যা রাজসূয়ের সমান, তুমি তাই কর। তোমার অধীন করদ রাজারা সুবর্ণ দেবেন, সেই সুবর্ণে লাঙ্গল নির্মাণ ক’রে যজ্ঞভূমি কর্ষণ করতে হবে, তার পর যথাবিধি যজ্ঞ আরম্ভ হবে। এই ষজ্ঞের নাম বৈষ্ণব যজ্ঞ, এর অনুষ্ঠান করলে তোমার অভিলাষ সফল হবে।

 মহাসমারোহে প্রভূত অর্থব্যয়ে যজ্ঞের আয়োজন হ’ল। দূতরা দ্রুতগামী রথে রাজা ও ব্রাহ্মণদের নিমন্ত্রণ করতে গেল। দুঃশাসন একজন দূতকে বললেন,