পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২৪৩

স্থালী এনে আমাকে দেখাও। দ্রৌপদী স্থালী আনলে কৃষ্ণ দেখলেন তার কানায় একটু শাকান্ন লেগে আছে, তিনি তাই খেয়ে বললেন, বিশ্বাত্মা যজ্ঞভোজী দেব তৃপ্তিলাভ করুন, তুষ্ট হ’ন। তার পর তিনি সহদেবকে[১] বললেন, ভোজনের জন্য মুনিদের শীঘ্র ডেকে আন।

 দুর্বাসা ও তাঁর শিষ্য মুনিগণ তখন স্নানের জন্য নদীতে নেমে অঘমর্ষণ[২] মন্ত্র জপ করছিলেন। সহসা তাঁদের কণ্ঠ থেকে অন্নরসের সহিত উদ্‌গার উঠতে লাগল, তাঁরা তৃপ্ত হয়ে জল থেকে উঠে পরস্পরের দিকে তাকাতে লাগলেন। মুনিরা দুর্বাসাকে বললেন, ব্রহ্মর্ষি, আমরা যেন আকণ্ঠ ভোজন ক’রে তৃপ্ত হয়েছি, এখন আবার কি ক’রে ভোজন করব? দুর্বাসা বললেন, আমরা বৃথা অন্ন পাক করতে ব’লে রাজর্ষি যুধিষ্ঠিরের নিকটে মহা অপরাধ করেছি, পাণ্ডবগণ ক্রুদ্ধ দৃষ্টিপাতে আমাদের দগ্ধ না করেন। তাঁরা হরিচরণে আশ্রিত সেজন্য তাঁদের ভয় করি। শিষ্যগণ, তোমরা শীঘ্র পালাও।

 সহদেব নদীতীরে এসে দেখলেন কেউ নেই। তিনি এই সংবাদ দিলে পাণ্ডবগণ ভাবলেন, হয়তো মধ্যরাত্রে দুর্বাসা সহসা ফিরে এসে আমাদের ছলনা করবেন। তাঁদের চিন্তিত দেখে কৃষ্ণ বললেন, কোপনস্বভাব দুর্বাসার আগমনে বিপদ হবে এই আশঙ্কায় দ্রৌপদী আমাকে স্মরণ করেছিলেন তাই আমি এসেছি। কোনও ভয় নেই, আপনাদের তেজে ভীত হয়ে দুর্বাসা পালিয়েছেন। পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদী বললেন, প্রভু গোবিন্দ, মহার্ণবে মজ্জমান লোকে যেমন ভেলা পেলে রক্ষা পায়, আমরা সেইরূপ তোমার কৃপায় দুস্তর বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছি। তার পর কৃষ্ণ পাণ্ডবগণের নিকট বিদায় নিয়ে চ’লে গেলেন।

৫২। দ্রৌপদীহরণ

 একদিন পঞ্চপাণ্ডব মহর্ষি ধৌম্যের অনুমতি নিয়ে দ্রৌপদীকে আশ্রমে রেখে বিভিন্ন দিকে মৃগয়া করতে গেলেন। সেই সময়ে সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ কাম্যকবনে উপস্থিত হলেন। তিনি বিবাহকামনায় শাল্বরাজ্যে যাচ্ছিলেন, অনেক রাজা তাঁর সহযাত্রী ছিলেন। দ্রৌপদীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি তাঁর সঙ্গী রাজা কোটিকাস্যকে বললেন, এই অনবদ্যাঙ্গী কে? এঁকে পেলে আমার আর

  1. পাঠান্তরে ভীমসেনকে।
  2. পাপনাশন। ঋগ্‌বেদীয় সূক্তবিশেষ।