পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৬
মহাভারত

মূঢ় সিন্ধুরাজ যদি ইন্দ্রের সঙ্গে পাতালেও গিয়ে থাকে তথাপি সে জীবিত অবস্থায় আমার হাত থেকে মুক্তি পাবে না।

 যুধিষ্ঠির বললেন, মহাবাহু, জয়দ্রথ[১] দুরাত্মা হ’লেও দুঃশলা ও গান্ধারীকে স্মরণ ক’রে তাকে বধ করা উচিত নয়। দ্রৌপদী কুপিত হ’য়ে বললেন, যদি আমার প্রিয়কার্য কর্তব্য মনে কর তবে সেই পুরুষাধম পাপী কুলাঙ্গারকে বধ করতেই হবে। যে শত্রু ভার্যা বা রাজ্য হরণ করে তাকে কখনও মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। তখন ভীম আর অর্জুন জয়দ্রথের সন্ধানে গেলেন। যুধিষ্ঠির আশ্রমে প্রবেশ ক’রে দেখলেন, সমস্ত বিশৃঙ্খল হ’য়ে আছে এবং মার্কণ্ডেয় প্রভৃতি বিপ্রগণ সেখানে সমবেত হয়েছেন।

 জয়দ্রথ এক ক্রোশ মাত্র দূরে আছেন শুনে ভীমার্জুন বেগে রথ চালালেন। অর্জুনের শরাঘাতে জয়দ্রথের অশ্বসকল বিনষ্ট হ’ল, তিনি পালাবার চেষ্টা করলেন। অর্জুন তাঁকে বললেন, রাজপুত্র, তুমি এই বিক্রম নিয়ে নারীহরণ করতে গিয়েছিলে! নিবৃত্ত হও, অনুচরদের শত্রুর হাতে ফেলে পালাচ্ছ কেন? জয়দ্রথ থামলেন না, ভীম ‘দাঁড়াও দাঁড়াও’ ব’লে তাঁর পিছনে ছুটলেন। দয়ালু অর্জুন বললেন, ওকে বধ করবেন না।

 বেগে গিয়ে ভীম জয়দ্রথের কেশ ধরলেন এবং তাঁকে ভূমিতে ফেলে নিষ্পিষ্ট করলেন। তার পর মস্তকে পদাঘাত করে তাঁর দুই জানু নিজের জানু দিয়ে চেপে প্রহার করতে লাগলেন। জয়দ্রথ মূর্ছিত হলেন। তাঁকে বধ করতে যুধিষ্ঠির বারণ করেছেন এই কথা অর্জুন মনে করিয়ে দিলে ভীম বললেন, এই পাপী কৃষ্ণাকে কষ্ট দিয়েছে, এ বাঁচবার যোগ্য নয়। কিন্তু আমি কি করব, যুধিষ্ঠির হচ্ছেন দয়ালু আর তুমি মূর্খতার জন্য সর্বদাই আমাকে বাধা দাও। এই ব’লে ভীম তাঁর অর্ধচন্দ্র বাণে জয়দ্রথের মাথা মাঝে মাঝে মুড়িয়ে পাঁচচুলো ক’রে দিলেন। তার পর তিনি জয়দ্রথকে বললেন, মূঢ়, যদি বাঁচতে চাও তবে সর্বত্র এই কথা বলবে যে তুমি আমাদের দাস। এই প্রতিজ্ঞা করলে তোমাকে প্রাণদান করব। জয়দ্রথ বললেন, তাই হবে। তখন ভীম ধূলিধূসরিত অচেতনপ্রায় জয়দ্রথকে বেঁধে রথে উঠিয়ে যুধিষ্ঠিরের কাছে নিয়ে এলেন। যুধিষ্ঠির একটু হেসে বললেন, এঁকে ছেড়ে দাও। ভীম বললেন, আপনি দ্রৌপদীকে বলুন, এই পাপাত্মা এখন পাণ্ডবদের দাস। যুধিষ্ঠিরের দিকে চেয়ে দ্রৌপদী ভীমকে বললেন,

  1. ইনি ধৃতরাষ্ট্রের কন্যা দুঃশলার স্বামী।