পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২৪৭

তুমি এর মাথায় পাঁচ জটা করেছ, এ রাজার দাস হয়েছে, এখন একে মুক্তি দাও। বিহ্বল জয়দ্রথ মুক্তি পেয়ে যুধিষ্ঠির ও উপস্থিত মুনিগণকে বন্দনা করলেন। যুধিষ্ঠির বললেন, পরুষাধম, তুমি দাসত্ব থেকে মুক্ত হ’লে, আর এমন দুষ্কার্য ক’রো না।

 লজ্জিত দুঃখিত জয়দ্রথ গঙ্গাদ্বারে গিয়ে উমাপতি বিরূপাক্ষের শরণাপন্ন হ’য়ে কঠোর তপস্যা করলেন। মহাদেব বর দিতে এলে জয়দ্রথ বললেন, আমি যেন পঞ্চপাণ্ডবকে যুদ্ধে জয় করতে পারি। মহাদেব বললেন, তা হবে না; অর্জুন ভিন্ন অপর পাণ্ডবগণকে সৈন্যসমেত কেবল এক দিনের জন্য তুমি জয় করতে পারবে। এই ব’লে তিনি অন্তর্হিত হলেন।


॥ রামোপাখ্যানপর্বাধ্যায় ॥

৫৪। রামের উপাখ্যান

 যুধিষ্ঠির মার্কণ্ডেয়কে প্রশ্ন করলেন, ভগবান, আমার চেয়ে মন্দভাগ্য কোনও রাজার কথা আপনি জানেন কি? মার্কণ্ডেয় বললেন, রাম যে দুঃখ ভোগ করেছিলেন, তার তুলনা নেই। যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে মার্কণ্ডেয় এই ইতিহাস বললেন।—[১]

 ইক্ষ্বাকুবংশীয় রাজা দশরথের চার মহাবল পুত্র ছিলেন—রাম লক্ষ্মণ ভরত শত্রুঘ্ন। রামের মাতা কৌশল্যা, ভরতের মাতা কৈকেয়ী এবং লক্ষ্মণ-শত্রুঘ্নের মাতা সুমিত্রা। বিদেহরাজ জনকের কন্যা সীতার সঙ্গে রামের বিবাহ হয়। এখন রাবণের জন্মকথা শোন। পুলস্ত্য নামে ব্রহ্মার এক মানসপুত্র ছিলেন, তাঁর পুত্র বৈশ্রবণ। এই বৈশ্রবণই শিবের সখা ধনপতি কুবের। ব্রহ্মার প্রসাদে তিনি রাক্ষসপুরী লঙ্কার অধিপতি হন এবং পুষ্পক বিমান লাভ করেন। বৈশ্রবণ তাঁর পিতাকে ত্যাগ ক’রে ব্রহ্মার সেবা করেছিলেন এজন্য পুলস্ত্য ক্রুদ্ধ হ’য়ে দেহান্তর গ্রহণ করেন, তখন তাঁর নাম হয় বিশ্রবা। বিভিন্ন রাক্ষসীর গর্ভে বিশ্রবার কতকগুলি সন্তান হয়—পুষ্পোৎকটার গর্ভে রাবণ ও কুম্ভকর্ণ, রাকার গর্ভে খর ও শূর্পণখা এবং মালিনীর

  1. এই রামোপাখ্যান বাল্মীকি-রামায়ণের সঙ্গে সর্বত্র মেলে না, সীতার বনবাস প্রভৃতি উত্তরকাণ্ডবর্ণিত ঘটনাবলী এতে নেই।