পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫২
মহাভারত

॥ পতিব্রতামাহাত্ম্যপর্বাধ্যায় ॥

৫৫। সাবিত্রী-সত্যবান

 যুধিষ্ঠির বললেন, আমার নিজের জন্য বা ভ্রাতাদের জন্য বা রাজ্যনাশের জন্য আমার তত দুঃখ হয় না যত দ্রৌপদীর জন্য হয়। দুরাত্মারা দ্যূতসভায় আমাদের যে ক্লেশ দিয়েছিল দ্রৌপদীই তা থেকে আমাদের উদ্ধার করেছিলেন। আবার তাঁকে জয়দ্রথ হরণ করলে। এই দ্রুপদকন্যার তুল্য পতিব্রতা মহাভাগা কোনও নারীর কথা আপনি জানেন কি? মার্কণ্ডেয় বললেন, মহারাজ, তুমি রাজকন্যা সাবিত্রীর ইতিহাস শোন, তিনি কুলস্ত্রীর সমস্ত সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন।—

 মদ্র দেশে অশ্বপতি নামে এক ধর্মাত্মা রাজা ছিলেন। তিনি সন্তানকামনায় সাবিত্রী[১] দেবীর উদ্দেশ্যে লক্ষ হোম করেন। আঠার বৎসর পূর্ণ হ’লে সাবিত্রী তুষ্ট হয়ে হোমকুণ্ড থেকে উঠে রাজাকে বর দিতে চাইলেন। অশ্বপতি বললেন, আমার বহু পুত্র হক। সাবিত্রী বললেন, তোমার অভিলাষ আমি পূর্বেই ব্রহ্মাকে জানিয়েছিলাম, তাঁর প্রসাদে তোমার একটি তেজস্বিনী কন্যা হবে। আমি তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মার আদেশে এই কথা বলছি, তুমি আর প্রত্যুক্তি ক’রো না।

 যথাকালে রাজার জ্যেষ্ঠা মহিষী এক রাজীবলোচনা কন্যা প্রসব করলেন। দেবী সাবিত্রী দান করেছেন এজন্য কন্যার নাম সাবিত্রী রাখা হ’ল। মূর্তিমতী লক্ষ্মীর ন্যায় এই কন্যা ক্রমে যৌবনবতী হলেন, কিন্তু তাঁর তেজের জন্য কেউ তাঁর পাণি প্রার্থনা করলেন না। একদিন অশ্বপতি তাঁকে বললেন, পুত্রী, তোমাকে সম্প্রদান করবার সময় এসেছে, কিন্তু কেউ তোমাকে চাচ্ছে না। তুমি নিজেই তোমার উপযুক্ত গুণবান পতির অন্বেষণ কর। এই ব’লে রাজা কন্যার ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দিলেন। সাবিত্রী লজ্জিতভাবে পিতাকে প্রণাম ক’রে বৃদ্ধ সচিবদের সঙ্গে রথারোহণে যাত্রা করলেন। তিনি রাজর্ষিগণের তপোবন দর্শন এবং তীর্থস্থানে ব্রাহ্মণকে ধনদান করতে লাগলেন।

 একদিন মদ্ররাজ অশ্বপতি সভায় ব’সে নারদের সঙ্গে কথা বলছেন এমন সময় সাবিত্রী ফিরে এসে প্রণাম করলেন। নারদ বললেন, রাজা, তোমার কন্যা

  1. সূর্যাধিষ্ঠাত্রী দেবী।