সাবিত্রী যেন সহাস্যবদনে কিন্তু সন্তপ্তহহৃদয়ে স্বামীর সঙ্গে গেলেন। যেতে যেতে সত্যবান পুণ্যসলিলা নদী, পুষ্পিত পর্বত প্রভৃতি দেখাতে লাগলেন। সাবিত্রী নিরন্তর স্বামীর দিকে চেয়ে রইলেন এবং নারদের বাক্য স্মরণ ক’রে তাঁকে মৃত জ্ঞান করলেন।
সত্যবান ফল পেড়ে তাঁর থলি ভরতি করলেন, তার পর কাঠ কাটতে লাগলেন। পরিশ্রমে তাঁর ঘাম হ’তে লাগল, মাথায় বেদনা হ’ল। তিনি বললেন, সাবিত্রী, আমি অত্যন্ত অসুস্থ বোধ করছি, আমার মাথা যেন শূল দিয়ে বিঁধছে, দাঁড়াতে পারছি না। সাবিত্রী স্বামীর মাথা কোলে রেখে ভূতলে ব’সে পড়লেন। মুহূর্তকাল পরে তিনি দেখলেন, এক দীর্ঘকায় শ্যামবর্ণ—রক্তলোচন ভয়ংকর পুরুষ পার্শ্বে এসে সত্যবানকে নিরীক্ষণ করছেন, তাঁর পরিধানে রক্তবাস, কেশ চূড়াবদ্ধ, হতে পাশ। তাঁকে দেখে সাবিত্রী ধীরে ধীরে তাঁর স্বামীর মাথা কোল থেকে নামালেন এবং দাঁড়িয়ে উঠে কম্পিতহহৃদয়ে কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, আপনার মূর্তি দেখে বুঝেছি আপনি দেবতা। আপনি কে, কি ইচ্ছা করেন?
যম বললেন, সাবিত্রী, তুমি পতিব্রতা তপশ্চারিণী, এজন্য তোমার সঙ্গে কথা বলছি। আমি যম। তোমার স্বামীর আয়ু শেষ হয়েছে, আমি এঁকে পাশবন্ধ করে নিয়ে যাব। সত্যবান ধার্মিক, গুণসাগর, সেজন্য আমি অনুচর না পাঠিয়ে নিজেই এসেছি। এই ব’লে যম সত্যবানের দেহ থেকে অঙ্গুষ্ঠপরিমাণ পুরুষ[১] পাশবদ্ধ করে টেনে নিলেন, প্রাণশূন্য দেহ শ্বাসহীন নিষ্প্রভ নিশ্চেষ্ট হয়ে পড়ে রইল; যম দক্ষিণ দিকে চললেন। সাবিত্রীকে পশ্চাতে আসতে দেখে যম বললেন, সাবিত্রী, তুমি ভর্তার ঋণ শোধ করেছ, এখন ফিরে গিয়ে এঁর পারলৌকিক ক্রিয়া কর।
সাবিত্রী বললেন, আমার স্বামী যেখানে যান অথবা তাঁকে যেখানে নিয়ে যাওয়া হয় আমারও সেখানে যাওয়া কর্তব্য, এই সনাতন ধর্ম। আমার তপস্যা ও পতিপ্রেমের বলে এবং আপনার প্রসাদে আমার গতি প্রতিহত হবে না। পণ্ডিতরা বলেন, একসঙ্গে সাত পা গেলেই মিত্রতা হয়; সেই মিত্রতায় নির্ভর করে আপনাকে কিছু বলছি শুনুন। পতিহীনা নারীর পক্ষে বনে বাস ক’রে ধর্মাচরণ করা অসম্ভব। যে ধর্মপথ সাধুজনের সম্মত সকলে তারই অনুসরণ করে, অন্য পথে যায় না। সাধুজন গার্হস্থ্য ধর্মকেই প্রধান বলেন।
যম বললেন, সাবিত্রী, তুমি আর এসো না, নিবৃত্ত হও। তোমার শুদ্ধ
- ↑ সূক্ষ্ম বা লিঙ্গ শরীর।