পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬০
মহাভারত

হও তবে তোমার সহজাত কবচ ও কুণ্ডল ছেদন ক’রে আমাকে দাও। কর্ণ বললেন, ভূমি স্ত্রী গো বাসস্থান বিশাল রাজ্য প্রভৃতি যা চান দেব, কিন্তু আমার সহজাত কবচ-কুণ্ডল দিতে পারি না, তাতেই আমি জগতে অবধ্য হয়েছি। ইন্দ্র আর কিছুই নেবেন না শুনে কর্ণ সহাস্যে বললেন, দেবরাজ, আপনাকে আমি পূর্বেই চিনেছি। আমার কাছ থেকে বৃথা বর নেওয়া আপনার অযোগ্য। আপনি দেবগণের ও অন্য প্রাণিগণের ঈশ্বর, আপনারও উচিত আমাকে বর দেওয়া। ইন্দ্র বললেন, সূর্যই পূর্বে জানতে পেরে তোমাকে সতর্ক করে দিয়েছেন। বৎস কর্ণ, আমার বজ্র ভিন্ন যা ইচ্ছা কর তা নাও। কর্ণ বললেন, আমার কবচ-কুণ্ডলের পরিবর্তে আমাকে অব্যর্থ শক্তি-অস্ত্র দিন যাতে শত্রুসংঘ ধ্বংস করা যায়।

 ইন্দ্র একট, চিন্তা ক’রে বললেন, আমার শক্তি তোমাকে দেব, তুমি তা নিক্ষেপ করলে একজন মাত্র শত্রুকে বধ করে সেই অস্ত্র আমার কাছে ফিরে আসবে। কর্ণ বললেন, আমি মহাযুদ্ধে একজন শত্রুকেই বধ করতে চাই, যাকে আমি ভয় করি। ইন্দ্র বললেন, তুমি এক শত্রুকে মারতে চাও, কিন্তু লোকে যাকে হরি নারায়ণ অচিন্ত্য প্রভৃতি বলে সেই কৃষ্ণই তাকে রক্ষা করেন। কর্ণ বললেন, যাই হক আপনি আমাকে অমোঘ শক্তি দিন যাতে একজন প্রতাপশালী শত্রুকে বধ করা যায়। আমি কবচ-কুণ্ডল ছেদন ক’রে দেব, কিন্তু আমার গাত্র যেন বিরূপ না হয়। ইন্দ্র বললেন, তোমার দেহের কোনও বিকৃতি হবে না। কিন্তু অন্য অস্ত্র থাকতে অথবা তোমার প্রাণসংশয় না হ’লে যদি অসাবধানে এই অস্ত্র নিক্ষেপ কর তবে তোমার উপরেই পড়বে। কর্ণ বললেন, আমি সত্য বলছি, পরম প্রাণসংশয় হ’লেই আমি এই অস্ত্র মোচন করব।

 ইন্দ্রের কাছ থেকে শক্তি-অস্ত্র নিয়ে কর্ণ নিজের কবচ-কুণ্ডল কেটে দিলেন, তা দেখে দেব দানব মানব সিংহনাদ ক’রে উঠল। কর্ণের মুখের কোনও বিকার দেখা গেল না। কর্ণ থেকে কুণ্ডল কেটে দিয়েছিলেন সেজন্যই তাঁর নাম কর্ণ। আর্দ্র কবচ-কুণ্ডল নিয়ে ইন্দ্র সহাস্যে চ’লে গেলেন। তিনি মনে করলেন, তাঁর বঞ্চনার ফলে কর্ণ যশস্বী হয়েছেন, পাণ্ডবরাও উপকৃত হয়েছেন।