পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২৬১

॥ আরণেয়পর্বাধ্যায়॥

৫৭। যক্ষ-যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নোত্তর

 একদিন এক ব্রাহ্মণ যুধিষ্ঠিরের কাছে এসে বললেন, আমার অরণি আর মন্থ[১] গাছে টাঙানো ছিল, এক হরিণ এসে তার শিঙে আটকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। আপনারা তা উদ্ধার করে দিন যাতে আমাদের অগ্নিহোত্রের হানি না হয়। যুধিষ্ঠির তখনই তাঁর ভ্রাতাদের সঙ্গে হরিণের অন্বেষণে যাত্রা করলেন। তাঁরা হরিণকে দেখতে পেয়ে নানাপ্রকার বাণ নিক্ষেপ করলেন কিন্তু বিদ্ধ করতে পারলেন না। তার পর সেই হরিণকে আর দেখা গেল না। পাণ্ডবগণ শ্রান্ত হয়ে দুঃখিতমনে বনমধ্যে এক বটগাছের শীতল ছায়ায় বসলেন।

 নকুল বললেন, আমাদের বংশে কখনও ধর্মলোপ হয় নি, আলস্যের ফলে কোনও কার্য অসিদ্ধ হয় নি, আমরা কোনও প্রার্থীকে ফিরিয়ে দিই নি; কিন্তু আজ আমাদের শক্তির সম্বন্ধে সংশর উপস্থিত হ’ল কেন? যুধিষ্ঠির উত্তর দিলেন, বিপদ কতপ্রকার হয় তার সীমা নেই, কারণও জানা যায় না; ধর্মই পাপপুণ্যের ফল ভাগ করে দেন। ভীম বললেন, দুঃশাসন দ্রৌপদীর অপমান করেছিল তথাপি তাকে আমি বধ করি নি, সেই পাপে আমাদের এই দশা হয়েছে। অর্জুন বললেন, সূতপুত্র কর্ণের তীক্ষ্ণ কটুবাক্য সহ্য করেছিলাম, তারই এই ফল। সহদেব বললেন, শকুনি যখন দ্যূতে জয়ী হয় তখন আমি তাকে হত্যা করি নি সেজন্য এমন হয়েছে।

 পাণ্ডবগণ তৃষাত হয়েছিলেন। যুধিষ্ঠিরের আদেশে নকুল বটগাছে উঠে চারিদিক দেখে জানালেন, জলের ধারে জন্মায় এমন অনেক গাছ দেখা যাচ্ছে, সারসের রবও শোনা যাচ্ছে, অতএব নিকটেই জল পাওয়া যাবে। যুধিষ্ঠির বললেন, তুমি শীঘ্র গিয়ে তূণে ক’রে জল নিয়ে এস।

 নকুল জলের কাছে উপস্থিত হয়ে পান করতে গেলেন, এমন সময়ে শুনলেন অন্তরীক্ষ থেকে কে বলছে—বৎস, এই জল আমার অধিকারে আছে, আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও তার পর পান করো। পিপাসার্ত নকুল সেই কথা অগ্রাহ্য করে জলপান করলেন এবং তখনই ভূপতিত হলেন।

 নকুলের বিলম্ব দেখে যুধিষ্ঠির সহদেবকে পাঠালেন। সহদেবও আকাশ-

  1. এক খণ্ড কাঠের উপর আর একটি দণ্ডাকার কাঠ মন্থন ক’রে আগুন জ্বালা হ’ত। নীচের কাঠ অরণি, উপরের কাঠ মন্থ।