পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২৬৫

করবেন। যক্ষ, কুন্তী ও মাদ্রী দুজনেই আমার পিতার ভার্যা, এঁদের দুজনেরই পুত্র থাকুক এই আমার ইচ্ছা, আমি দুই মাতাকেই তুল্য জ্ঞান করি। যক্ষ বললেন, ভরতশ্রেষ্ঠ, তুমি অর্থ ও কাম অপেক্ষা অনৃশংসতাই শ্রেষ্ঠ মনে কর, অতএব তোমার সকল ভ্রাতাই জীবনলাভ করুন।

 ভীমাদি সকলেই গাত্রোত্থান করলেন, তাঁদের ক্ষুৎপিপাসা দূর হ’ল। যুধিষ্ঠির যক্ষকে বললেন, আপনি অপরাজিত হয়ে এই সরোবরের তীরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনি কোন, দেবতা? আমার এই মহাবীর ভ্রাতাদের নিপাতিত করতে পারেন এমন যোদ্ধা আমি দেখি না। এঁরা সুখে অক্ষতদেহে জাগরিত হয়েছেন। বোধ হয় আপনি আমাদের সুহৃৎ বা পিতা।

 যক্ষ বললেন, বৎস, আমি তোমার জনক ধর্ম। তুমি বর চাও। যুধিষ্ঠির বললেন, যাঁর অরণি ও মন্থ হরিণ নিয়ে গেছে সেই ব্রাহ্মণের অগ্নিহোত্র যেন লুপ্ত না হয়। ধর্ম বললেন, তোমাকে পরীক্ষা করবার জন্য আমিই মৃগরূপে অরণি ও মন্থ হরণ করেছিলাম, এখন তা ফিরিয়ে দিচ্ছি। তুমি অন্য বর চাও। যুধিষ্ঠির বললেন, আমাদের দ্বাদশ বৎসর বনে অতিবাহিত হয়েছে, এখন ত্রয়োদশ বৎসর উপস্থিত। আমরা যেখানেই থাকি, কোনও লোক যেন আমাদের চিনতে না পারে। ধর্ম বললেন, তাই হবে, তোমরা নিজ রূপে বিচরণ করলেও কেউ চিনতে পারবে না। তোমরা ত্রয়োদশ বৎসর বিরাট রাজার নগরে অজ্ঞাত হয়ে থেকো, তোমরা যেমন ইচ্ছা সেইপ্রকার রূপ ধারণ করতে পারবে।

 তার পর পাণ্ডবগণ আশ্রমে ফিরে গিয়ে ব্রাহ্মণকে অরণি ও মন্থ দিলেন।

৫৮। ত্রয়োদশ বৎসরের আরম্ভ

 পাণ্ডবগণ তাঁদের সহবাসী তপস্বিগণকে কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, আপনারা জানেন যে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা কপট উপায়ে আমাদের রাজ্য হরণ করেছে, বহু দুঃখও দিয়েছে। আমরা দ্বাদশ বৎসর বনবাসে কষ্টে যাপন করেছি, এখন শেষ ত্রয়োদশ বৎসর উপস্থিত হয়েছে। আপনারা অনুমতি দিন, আমরা এখন অজ্ঞাতবাস করব। দুরাত্মা দুর্যোধন কর্ণ আর শকুনি যদি আমাদের সন্ধান পায় তবে বিষম অনিষ্ট করবে।

 যুধিষ্ঠির বললেন, এমন দিন কি হবে যখন আমরা ব্রাহ্মণদের সঙ্গে আবার নিজ দেশে নিজ রাজ্যে বাস করতে পারব? অশ্রুরূদ্ধকণ্ঠে এই কথা বলে তিনি