পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৮
মহাভারত

করব, কিন্তু বধ করব না। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলব, আমি রাজা যুধিষ্ঠিরের হস্তী ও বৃষ দমন করতাম এবং তাঁর সূপকার ও মল্ল ছিলাম।

 যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নের উত্তরে অর্জুন বললেন, আমি বৃহন্নলা নাম নিয়ে নপুংসক সেজে যাব, বাহুতে যে জ্যাঘর্ষণের চিহ্ন আছে তা বলয় দিয়ে ঢাকব, কানে উজ্জ্বল কুণ্ডল এবং হাতে শাঁখা পরব, চুলে বেণী বাঁধব, এবং রাজভবনের স্ত্রীদের নৃত্য-গীত-বাদ্য শেখাব। জিজ্ঞাসা করলে বলব, আমি দ্রৌপদীর পরিচারিকা ছিলাম।

 নকুল বললেন, আমি অশ্বের রক্ষা ও চিকিৎসায় নিপুণ, গ্রন্থিক নাম নিয়ে আমি বিরাটরাজার অশ্বরক্ষক হব। নিজের পরিচয় এই দেব যে পূর্বে আমি যুধিষ্ঠিরের অশ্বরক্ষক ছিলাম।

 সহদেব বললেন, আমি তন্তিপাল নাম নিয়ে বিরাট রাজার গোসমূহের তত্ত্বাবধায়ক হব। আমি গরুর চিকিৎসা দোহনপদ্ধতি ও পরীক্ষা জানি; সুলক্ষণ বৃষও চিনতে পারি।

 যুধিষ্ঠির বললেন, আমাদের এই ভার্যা প্রাণাপেক্ষা প্রিয়া, মাতার ন্যায় পালনীয়া, জ্যেষ্ঠা ভগিনীর ন্যায় মাননীয়া। ইনি সেখানে কোন্ কর্ম করবেন? দ্রৌপদী সুকুমারী, অভিমানিনী, জন্মাবধি মাল্য গন্ধ ও বিবিধ বেশভূষায় অভ্যস্ত। দ্রৌপদী বললেন, যে নারী স্বাধীনভাবে পরগৃহে দাসীর কর্ম করে তাকে সৈরিন্ধ্রী বলা হয়। কেশসংস্কারে নিপুণ সৈরিন্ধ্রীর রূপে আমি যাব, বলব যে পূর্বে আমি দ্রৌপদীর পরিচারিকা ছিলাম। রাজমহিষী সুদেষ্ণা আমাকে আশ্রয় দেবেন, তুমি ভেবো না। যুধিষ্ঠির বললেন, কল্যাণী, তোমার সংকল্প ভাল। মহৎ কুলে তোমার জন্ম, তুমি সাধ্বী, পাপকর্ম জান না। এমন ভাবে চ’লো যাতে পাপাত্মা শত্রুরা সুখী না হয়, তোমাকে কেউ যেন জানতে না পারে।

২। ধৌম্যের উপদেশ ― অজ্ঞাতবাসের উপক্রম

 পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদী নিজ নিজ কর্ম স্থির করার পর যুধিষ্ঠির বললেন, পুরোহিত ধৌম্য দ্রুপদ রাজার ভবনে যান এবং সেখানে অগ্নিহোত্র রচনা করুন; তাঁর সঙ্গে সারথি, পাচক দ্রৌপদীর পরিচারিকারাও যাক। রথগুলি নিয়ে ইন্দ্রসেন প্রভৃতি দ্বারকায় চ’লে যাক। কেউ প্রশ্ন করলে সকলেই বলবে, পাণ্ডবরা কোথায় গেছেন তা আমরা জানি না।