পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭০
মহাভারত

হবে; অর্জুনের গাণ্ডীব, ধনু অনেকেই জানে, তা দেখে আমাদের চিনে ফেলবে। অর্জুন বললেন, শ্মশানের কাছে পর্বতশৃঙ্গে ওই যে বৃহৎ শমীবৃক্ষ রয়েছে তাতে আমাদের অস্ত্র রাখলে কেউ নিতে সাহস করবে না। তখন পাণ্ডবগণ তাঁদের ধনু থেকে জ্যা বিযুক্ত করলেন এবং দীর্ঘ উজ্জ্বল খড়্‌গ, তূণীর ও ক্ষুরধার বৃহৎ বাণ সকল ধনুর সঙ্গে বাঁধলেন। নকুল শমীবৃক্ষে উঠে একটি দৃঢ় শাখায় অস্ত্রগুলি এমনভাবে রজ্জুবদ্ধ করলেন যাতে বৃষ্টি না লাগে। তার পর তিনি একটি মৃতদেহ সেই বৃক্ষে বেঁধে দিলেন, যাতে পূতিগন্ধ পেয়ে লোকে কাছে না আসে। গোপাল মেষপাল প্রভৃতির প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বললেন, ইনি আমাদের মাতা, বয়স আশি বা একশ, মৃতদেহ গাছে বেঁধে রাখাই আমাদের কুলধর্ম।

 যুধিষ্ঠির নিজেদের এই পাঁচটি গুপ্ত নাম রাখলেন — জয় জয়ন্ত বিজয় জয়সেন জয়দ্‌বল। তার পর সকলে সেই বিশাল নগরে প্রবেশ করলেন।

৩। বিরাটভবনে যুধিষ্ঠিরাদির আগমন

 বিরাট রাজার সভায় প্রথমে ব্রাহ্মণবেশী যুধিষ্ঠির উপস্থিত হলেন। তাঁর রূপ মেঘাবৃত সূর্য ও ভস্মাবৃত অগ্নির ন্যায়, তিনি বৈদূর্যখচিত স্বর্ণময় পাশক বস্ত্রাঞ্চলে বেঁধে বাহুমূলে ধারণ ক’রে আছেন। তাঁকে দেখে বিরাট তাঁর সভাসদ্‌গণকে বললেন, ইনি কে? এঁকে ব্রাহ্মণ মনে হয় না, বোধ হয় ইনি কোনও রাজা; সঙ্গে গজ বাজি রথ না থাকলেও এঁকে ইন্দ্রের ন্যায় দেখাচ্ছে। যুধিষ্ঠির নিকটে এসে বললেন, মহারাজ, আমি বৈয়াঘ্রপদ্য-গোত্রীয় ব্রাহ্মণ, আমার সর্বস্ব বিনষ্ট হয়েছে, জীবিকার জন্য আপনার কাছে এসেছি। পূর্বে আমি যুধিষ্ঠিরের সখা ছিলাম। আমার নাম কঙ্ক, আমি দ্যূতক্রীড়ায় নিপুণ।

 বিরাট বললেন, যা চাও তাই তোমাকে দেব, তুমি রাজা হবার যোগ্য, এই মৎস্যদেশ শাসন কর। দ্যূতকারগণ আমার প্রিয়, আমি তোমার বশবর্তী হয়ে থাকব। যুধিষ্ঠির বললেন, মৎস্যরাজ, এই বর দিন যেন দ্যূতক্রীড়ায় নীচ লোকের সঙ্গে আমার বিবাদ না হয়, এবং আমি যাকে পরাজিত করব সে তার ধন আটকে রাখতে পারবে না। বিরাট বললেন, কেউ যদি তোমার অপ্রিয় আচরণ করে তবে আমি তাকে নিশ্চয় বধ করব, যদি সে ব্রাহ্মণ হয় তবে নির্বাসিত করব। সমাগত প্রজাবৃন্দ শোন—যেমন আমি তেমনই কঙ্ক এই রাজ্যের প্রভু। কঙ্ক, তুমি আমার সখা এবং আমার সমান, তুমি প্রচুর পানভোজন ও বস্ত্র পাবে, আমার ভবনের সকল দ্বার তোমার জন্য উদ্‌ঘাটিত