পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭২
মহাভারত

পুরুষরা মোহিত হবে না কেন? এখানকার বৃক্ষগুলিও যেন তোমাকে নমস্কার করছে। সুন্দরী, তোমার অলৌকিক রূপ দেখলে বিরাট রাজা আমাকে ত্যাগ ক’রে সর্বান্তঃকরণে তোমাতেই আসক্ত হবেন। কর্কটকী (স্ত্রী-কাঁকড়া) যেমন নিজের মরণের নিমিত্তই গর্ভধারণ করে, তোমাকে আশ্রয় দেওয়া আমার পক্ষে সেইরূপ। দ্রৌপদী বললেন, বিরাট রাজা বা অন্য কেউ আমাকে পাবেন না, কারণ পাঁচজন মহাবলশালী গন্ধর্ব যুবা আমার স্বামী, তাঁরা সর্বদা আমাকে রক্ষা করেন। আমি এখন ব্রতপালনের জন্যই কষ্ট স্বীকার করছি। যিনি আমাকে উচ্ছিষ্ট দেন না এবং আমাকে দিয়ে পা ধোয়ান না তাঁর উপর আমার গন্ধর্ব পতিরা তুষ্ট হন। যে পুরুষ সামান্য স্ত্রীর ন্যায় আমাকে কামনা করে সে সেই রাত্রিতেই পরলোকে যায়। সুদেষ্ণা বললেন, আনন্দদায়িনী, তুমি যেমন চাও সেই ভাবেই তোমাকে রাখব, কারও চরণ বা উচ্ছিষ্ট তোমাকে স্পর্শ করতে হবে না।


 তার পর সহদেব গোপবেশ ধারণ করে বিরাটের সভায় এলেন। রাজা বললেন, বৎস, তুমি কে, কোথা থেকে আসছ, কি চাও? সহদেব গোপভাষায় গম্ভীরস্বরে উত্তর দিলেন, আমি অরিষ্টনেমি নামক বৈশ্য, পূর্বে পাণ্ডবদের গোপরীক্ষক ছিলাম। তাঁরা এখন কোথায় গেছেন জানি না, আমি আপনার কাছে থাকতে চাই। যুধিষ্ঠিরের বহু লক্ষ গাভী ও বহু সহস্র বৃষ ছিল, আমি তাদের পরীক্ষা করতাম। লোকে আমাকে তন্তিপাল বলত। আমি দশযোজনব্যাপী গরুর দলও গণনা করতে এবং তাদের ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমান বলতে পারি, যে উপায়ে গোবংশের বৃদ্ধি হয় এবং রোগ না হয় তাও জানি। আমি সুলক্ষণ বৃষ চিনতে পারি যাদের মূত্র আঘ্রাণ করলে বন্ধ্যাও প্রসব করে। বিরাট বললেন, আমার বিভিন্ন জাতীয় এক এক লক্ষ পশু আছে। সেই সমস্ত পশুর ভার তোমার হাতে দিলাম, তাদের পালকগণও তোমার অধীন থাকবে।

 তার পর সভাস্থ সকলে দেখলেন, একজন রূপবান বিশালকায় পুরুষ আসছেন, তাঁর কর্ণে দীর্ঘ কুণ্ডল, হস্তে শঙ্খ ও সুবর্ণ নির্মিত বলয়, কেশরাশি উন্মুক্ত। নপুংসকবেশী অর্জুনকে বিরাট বললেন, তুমি হস্তিযূথপতির ন্যায় বলবান সুদর্শন যুবা, অথচ বাহুতে বলয় এবং কর্ণে কুণ্ডল প’রে বেণী উন্মুক্ত ক’রে এসেছ। যদি রথে চড়ে যোদ্ধার বেশে কবচ ও ধনুর্বাণ ধারণ করে আসতে তবেই তোমাকে মানাত। তোমার মত লোক ক্লীব হ’তে পারে না এই আমার