পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরাটপর্ব
২৭৩

বিশ্বাস। আমি বৃদ্ধ হয়েছি, রাজ্যভার থেকে মুক্তি চাই, তুমিই এই মৎস্যদেশ শাসন কর।

 অর্জুন বললেন, মহারাজ, আমি নৃত্য-গীত-বাদ্যে নিপুণ, আপনার কন্যা উত্তরার শিক্ষার ভার আমাকে দিন। আমার এই ক্লীবরূপ কেন হয়েছে সেই দুঃখময় বৃত্তান্ত আপনাকে পরে বলব। আমার নাম বৃহন্নলা, আমি পিতৃমাতৃহীন, আমাকে আপনার পুত্র বা কন্যা জ্ঞান করবেন। রাজা বললেন, বৃহন্নলা, তোমার অভীষ্ট কর্মের ভার তোমাকে দিলাম, তুমি আমার কন্যা এবং অন্যান্য কুমারীদের নৃত্যাদি শেখাও। অনন্তর বিরাট রাজা অর্জুনের ক্লীবত্ব সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হয়ে তাঁকে অন্তঃপুরে পাঠিয়ে দিলেন। অর্জুন রাজকন্যা উত্তরা ও তাঁর সহচরীদের নৃত্য-গীতবাদ্য শিখিয়ে এবং প্রিয়কার্য ক’রে তাঁদের প্রীতিভাজন হলেন।

 তার পর আকাশচ্যুত সূর্যের ন্যায় নকুলকে আসতে দেখে মৎস্যরাজ বিরাট বললেন, এই দেবতুল্য পুরুষটি কে? এ সাগ্রহে আমার অশ্বসকল দেখছে, নিশ্চয় এই লোক অশ্বতত্ত্বজ্ঞ। রাজার কাছে এসে নকুল বললেন, মহারাজের জয় হ’ক, সভাস্থ সকলের শুভ হ’ক। আমি যুধিষ্ঠিরের অশ্বদলের তত্ত্বাবধান করতাম, আমার নাম গ্রন্থিক। অশ্বের স্বভাব, শিক্ষাপ্রণালী, চিকিৎসা এবং দুষ্ট অশ্বের সংশোধন আমার জানা আছে। বিরাট বললেন, আমার যত অশ্ব আছে সে সকলের তত্ত্বাবধানের ভার তোমাকে দিলাম, সারথি প্রভৃতিও তোমার অধীন হবে। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন যুধিষ্ঠিরের দর্শন পেয়েছি। ভৃত্যের সাহায্য বিনা তিনি এখন কি ক’রে বনে বাস করছেন?

 সাগর পর্যন্ত পৃথিবীর যাঁরা অধিপতি ছিলেন সেই পাণ্ডবগণ এইরূপে কষ্ট স্বীকার ক’রে মৎস্যরাজ্যে অজ্ঞাতবাস করতে লাগলেন।


॥ সময়পালনপর্বাধ্যায় ॥

৪। মল্লগণের সহিত ভীমের যুদ্ধ

 যুধিষ্ঠির বিরাট রাজা, তাঁর পুত্র এবং সভাসদ্‌বর্গ সকলেরই প্রিয় হলেন। তিনি অক্ষয়হৃদয়[১] জানতেন, সেজন্য দ্যূতক্রীড়ায় সকলকেই সূত্রবদ্ধ পক্ষীর ন্যায়

  1. মহর্ষি বৃহদশ্বের নিকট লব্ধ। বনপর্ব ১৬-পরিচ্ছেদের পাদটীকা এবং ১৯-পরিচ্ছেদের শেষ ভাগ দ্রষ্টব্য।