পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরাটপর্ব
২৭৫

দ্রৌপদীকে দেখতে পেলেন। তিনি কামাবিষ্ট হয়ে সুদেষ্ণার কাছে গিয়ে যেন হাসতে হাসতে বললেন, বিরাটভবনে এই রমণীকে আমি পূর্বে দেখি নি। মদিরা যেমন গন্ধে উন্মত্ত করে এই রমণীর রূপ সেইপ্রকার আমাকে উন্মত্ত করেছে। এই মনোহারিণী সুন্দরী কে, কোথা থেকে এসেছে? এ আমার চিত্ত মথিত করেছে, এর সঙ্গে মিলন ভিন্ন আমার রোগের অন্য ঔষধ নেই। তোমার এই পরিচারিকা যে কর্ম করছে তা তার যোগ্য নয়, সে আমার গৃহে এসে আমার সমস্ত সম্পত্তির উপর কর্তৃত্ব এবং গৃহ শোভিত করুক।

 শৃগাল যেমন মৃগেন্দ্রকন্যার কাছে যায় সেইরূপ কীচক দ্রৌপদীর কাছে গিয়ে বললেন, সুন্দরী, তোমার রূপ ও প্রথম বয়স বৃথা নষ্ট হচ্ছে, পুরুষে যদি ধারণ না করে তবে পুষ্পমালা শোভা পায় না। চারুহাসিনী, আমার পুরাতন স্ত্রীদের আমি ত্যাগ করব, তারা তোমার দাসী হবে, আমি তোমার দাস হব। দ্রৌপদী উত্তর দিলেন, সূতপত্র, আমি নিম্নবর্ণের সৈরিন্ধ্রী, কেশসংস্কাররূপ হীন কার্য করি, আপনার কামনার যোগ্য নই। আমি পরের পত্নী, বীরগণ আমাকে রক্ষা করেন। যদি আমাকে পাবার চেষ্টা করেন তবে আমার গন্ধর্ব পতিগণ আপনাকে বধ করবেন। অবোধ বালক যেমন নদীর এক তীরে থেকে অন্য তীরে যেতে চায়, রোগার্ত যেমন কালরাত্রির প্রার্থনা করে, মাতৃক্রোড়স্থ শিশু যেমন চন্দ্র চায়, আপনি সেইরূপ আমাকে চাচ্ছেন।

 দ্রৌপদী কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে কীচক সুদেষ্ণার কাছে গিয়ে বললেন, সৈরিন্ধ্রী যাতে আমাকে ভজনা করে সেই উপায় কর, তবেই আমার জীবনরক্ষা হবে। সুদেষ্ণা তাঁর ভ্রাতা কীচকের অভিলাষ, নিজের ইষ্ট, এবং দ্রৌপদীর উদ্‌বেগ সম্বন্ধে চিন্তা করে বললেন, তুমি কোনও পর্বের উপলক্ষ্যে নিজের ভবনে সুরা ও অন্নাদি প্রস্তুত করাও, আমি সুরা আনবার জন্য সৈরিন্ধ্রীকে তোমার কাছে পাঠাব, তখন তুমি নির্জন স্থানে তাকে চাটুবাক্যে সম্মত করিও।

 উত্তম মদ্য, ছাগ শূকর প্রভৃতির মাংস, এবং অন্যান্য খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুত করিয়ে কীচক রাজমহিষীকে নিমন্ত্রণ করলেন। সুদেষ্ণা দ্রৌপদীকে বললেন, কল্যাণী, তুমি কীচকের গৃহ থেকে পানীয় নিয়ে এস, আমার বড় পিপাসা হয়েছে। দ্রৌপদী বললেন, রাজ্ঞী, আমি কীচকের কাছে যাব না, তিনি নির্লজ্জ। আমি ব্যভিচারিণী হতে পারব না, আপনার কর্মে নিযুক্ত হবার কালে যে সময় (শর্ত) করেছিলাম তা আপনি জানেন। আপনার অনেক দাসী আছে, তাদের কাকেও পাঠান। সুদেষ্ণা বললেন, আমি তোমাকে পাঠালে কীচক তোমার কোনও অনিষ্ট