পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৬
মহাভারত

রাজ্য ও প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। যুধিষ্ঠির বললেন, মৎস্যরাজ, আপনার মনোজ্ঞ বাক্যে আমি আনন্দিত হয়েছি, আপনি অনিষ্ঠুর হয়ে প্রসন্নমনে প্রজাপালন করুন, আপনার বিজয়সংবাদ ঘোষণার জন্য সত্বর রাজধানীতে দূত পাঠান।

১২। উত্তরগোগ্রহ — উত্তর ও বৃহন্নলা

 বিরাট যখন ত্রিগর্তসেনার সঙ্গে যুদ্ধ করতে যান সেই সময়ে ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ প্রভৃতির সঙ্গে দুর্যোধন মৎস্যদেশে উপস্থিত হলেন এবং গোপালকদের তাড়িয়ে দিয়ে ষাট হাজার গরু হরণ[১] করলেন। গোপগণের অধ্যক্ষ রথে চড়ে দ্রুতবেগে রাজধানীতে এল এবং বিরাটের পত্র ভূমিঞ্জয় বা উত্তরকে সংবাদ দিয়ে বললে, রাজপুত্র, আপনি শীঘ্র এসে গোধন উদ্ধার করুন, মহারাজ আপনাকেই এই শূন্য রাজধানীর রক্ষক নিযুক্ত ক’রে গেছেন।

 উত্তর বললেন, যদি অশ্বচালনে দক্ষ কোনও সারথি পাই তবে এখনই ধনুর্বাণ নিয়ে যুদ্ধে যেতে পারি। আমার যে সারথি ছিল সে পূর্বে এক মহাযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তুমি শীঘ্র একজন সারথি দেখ। উপযুক্ত অশ্বচালক পেলে আমি দুর্যোধন ভীষ্ম কর্ণ কৃপ দ্রোণ প্রভৃতিকে বিনষ্ট করে মুহূর্তমধ্যে গরু উদ্ধার ক’রে আনব। আমি সেখানে ছিলাম না বলেই কৌরবরা গোধন হরণ করেছে। কৌরবরা আজ আমার বিক্রম দেখে ভাববে, স্বয়ং অর্জুন আমাদের আক্রমণ করলেন নাকি?

 দ্রৌপদী উত্তরের মুখে বার বার এইরূপ কথা এবং অর্জুনের উল্লেখ সইতে পারলেন না। তিনি ধীরে ধীরে বললেন, রাজপুত্র, বৃহন্নলা পূর্বে অর্জুনের সারথি ও শিষ্য ছিলেন, তিনি অশ্ববিদ্যায় অর্জুনের চেয়ে কম নন। আপনার কনিষ্ঠা ভগিনী উত্তরা যদি বলেন তবে বৃহন্নলা নিশ্চয় আপনার সারথি হবেন। ভ্রাতার অনুরোধে উত্তরা তখনই নৃত্যশালায় গিয়ে অর্জুনকে সকল ঘটনা জানিয়ে বললেন, বৃহন্নলা, তুমি আমার ভ্রাতার সারথি হয়ে যাও, তোমার উপর আমার প্রীতি আছে সেজন্য একথা বলছি, যদি না শোন তবে আমি জীবন ত্যাগ করব। অর্জুন উত্তরের কাছে গিয়ে বললেন, যুদ্ধস্থানে সারথ্য করতে পারি এমন কি শক্তি আমার আছে? আমি কেবল নৃত্য-গীত-বাদ্য জানি। উত্তর বললেন, তুমি গায়ক বাদক নর্তক যাই হও, শীঘ্র আমার রথে উঠে অশ্বচালনা কর।


  1. এই গোহরণ বা গোগ্রহ বিরাট রাজ্যের উত্তরে হয়েছিল।