পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৮
মহাভারত

তবে আমিই যুদ্ধ করব, তুমি আমার সারথি হও। ভয়ার্ত উত্তর নিতান্ত অনিচ্ছায় রথে উঠলেন এবং অর্জুনের নির্দেশে শমীবৃক্ষের দিকে রথ নিয়ে চললেন।


 কৌরবপক্ষীয় বীরগণকে দ্রোণাচার্য বললেন, নানাপ্রকার দুর্লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, বায়ু বালুকাবর্ষণ করছে, আকাশ ভস্মের ন্যায় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়েছে, অস্ত্রসকল কোষ থেকে স্থলিত হচ্ছে। তোমরা ব্যূহিত হয়ে আত্মরক্ষা কর, গোধন রক্ষা কর, মহাধনুর্ধর পার্থই ক্লীববেশে আসছেন তাতে সন্দেহ নেই।

 কর্ণ বললেন, আপনি সর্বদা অর্জুনের প্রশংসা আর আমাদের নিন্দা করেন, অর্জুনের শক্তি আমার বা দুর্যোধনের ষোল ভাগের এক ভাগও নয়। দুর্যোধন বললেন, ওই লোক যদি অর্জুন হয় তবে আমাদের কার্য সিদ্ধ হয়েছে, আমরা জানতে পেরেছি সেজন্য পাণ্ডবদের আবার দ্বাদশ বৎসর বনে যেতে হবে। আর যদি অন্য কেউ হয় তবে তীক্ষ্ণ শরে ওকে ভূপাতিত করব।


 শমীবৃক্ষের কাছে এসে অর্জুন উত্তরকে বললেন, তুমি শীঘ্র এই বৃক্ষে উঠে পাণ্ডবদের ধনু শর ধ্বজ ও কবচ নামিয়ে আন। তোমার ধনু আমার আকর্ষণ সইতে পারবে না, শত্রুর হস্তী বিনষ্ট করতেও পারবে না। উত্তর বললেন, শুনেছি এই বৃক্ষে একটা মৃতদেহ বাঁধা আছে, আমি রাজপত্রে হয়ে কি ক’রে তা ছোঁব? অর্জুন বললেন, ভয় পেয়ো না, ওখানে মৃতদেহ নেই, যা আছে তা ধনু প্রভৃতি অস্ত্র, তুমি স্পর্শ করলে পবিত্র হবে। তোমাকে দিয়ে আমি নিন্দিত কর্ম করাব কেন? অর্জুনের আজ্ঞানুসারে উত্তর শমীবৃক্ষ থেকে অস্ত্রসমূহ নামিয়ে এনে বন্ধন খুলে ফেললেন এবং সূর্যতুল্য দীপ্তিমান সর্পাকৃতি ধনুসকল দেখে ভয়ে রোমাঞ্চিত হলেন। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে অর্জুন বললেন, এই শতস্বর্ণবিন্দুযুক্ত সহস্রগোধাচিহ্নিত ধনু অর্জুনের, এরই নাম গাণ্ডীব, খাণ্ডবদাহকালে বরুণের নিকট অর্জুন এই ধনু পেয়েছিলেন। এই ধনু যার ধারণস্থান স্বর্ণময়, ভীমের; ইন্দ্রগোপচিহ্নিতে এই ধনু যুধিষ্ঠিরের; সুবর্ণ সূর্য চিহ্নিত এই ধনু নকুলের; স্বর্ণময় পতঙ্গচিহ্নিত এই ধনু সহদেবের। তাঁদের বাণ তূণীর খড়্‌গ প্রভৃতিও এই সঙ্গে আছে।

 উত্তর বললেন, মহাত্মা পাণ্ডবগণের অস্ত্রসকল এখানে রয়েছে, কিন্তু তাঁরা কোথায়? দ্রৌপদীই বা কোথায়? অর্জুন বললেন, আমি পার্থ, সভাসদ কঙ্কই যুধিষ্ঠির, পাচক বল্লব ভীম, অশ্বশালা আর গোশালার অধ্যক্ষ নকুল-সহদেব।