পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরাটপর্ব
২৮৯

সৈরিন্ধ্রীই দ্রৌপদী, যাঁর জন্য কীচক মরেছে। উত্তর বললেন, আমি অর্জুনের দশটি নাম শুনেছি, যদি বলতে পারেন তবে আপনার সব কথা বিশ্বাস করব। অর্জুন বললেন, আমার দশ নাম বলছি শোন।—আমি সর্বদেশ জয় ক’রে ধন আহরণ করি সেজন্য আমি ধনঞ্জয়। যুদ্ধে শত্রুদের জয় না ক’রে ফিরি না সেজন্য আমি বিজয়। আমার রথে রজতশুভ্র অশ্ব থাকে সেজন্য আমি শ্বেতবাহন। হিমালয়পৃষ্ঠে উত্তর ও পূর্ব ফল্‌গুনী নক্ষত্রের যোগে আমার জন্ম সেজন্য আমি ফাল্‌গুন। দানবদের সঙ্গে যুদ্ধকালে ইন্দ্র আমাকে সূর্যপ্রভ কিরীট দিয়েছিলেন, সেজন্য আমি কিরীটী। যুদ্ধকালে বীভৎস কর্ম করি না সেজন্য আমার বীভৎসু নাম। বাম ও দক্ষিণ উভয় হস্তেই আমি গাণ্ডীব আকর্ষণ করতে পারি সেজন্য সব্যসাচী নাম। আমার শুভ্র (নিষ্কলঙ্ক) যশ চতুঃসমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত, আমার সকল কর্মও শুভ্র, এজন্য অর্জুন (শুভ্র) নাম। আমি শত্রুবিজয়ী এজন্য জিষ্ণু নাম! সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ বালক সকলের প্রিয়, এজন্য পিতা আমার কৃষ্ণ নাম রেখেছিলেন।

 অর্জুনকে অভিবাদন ক’রে উত্তর বললেন, মহাবাহু, ভাগ্যক্রমে আপনার দর্শন পেয়েছি, আমি না জেনে যা বলেছি তা ক্ষমা করুন। আমার ভয় দূর হয়েছে, আপনি রথে উঠুন, যেদিকে বলবেন সেদিকে নিয়ে যাব। কোন্ কর্মের ফলে আপনি ক্লীবত্ব পেয়েছেন? অর্জুন বললেন, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার আদেশে আমি এক বৎসর ব্রহচর্য ব্রত পালন করছি, আমি ক্লীব নই। এখন আমার ব্রত সমাপ্ত হয়েছে। অর্জুন তাঁর বাহু থেকে বলয় খুলে ফেলে করতলে স্বণর্খচিত বর্ম পরলেন এবং শুভ্র বস্ত্রে কেশ বন্ধন করলেন। তার পর তিনি পূর্বমুখ হয়ে সংযতচিত্তে তাঁর অস্ত্রসমূহকে স্মরণ করলেন। তারা কৃতাঞ্জলি হয়ে বললে, ইন্দ্রপুত্র, কিংকরগণ উপস্থিত। অর্জুন তাদের নমস্কার ও স্পর্শ ক’রে বললেন, স্মরণ করলেই তোমরা এস।

 গাণ্ডীব ধনুতে গুণ পরিয়ে অর্জুন সবলে আকর্ষণ করলেন। সেই বজ্রনাদতুল্য টংকার শুনে কৌরবগণ বুঝলেন যে, অর্জুনেরই এই জ্যানির্ঘোষ।

১৩। দ্রোণ-দুর্যোধনাদির বিতর্ক — ভীষ্মের উপদেশ

 উত্তরের রথে যে সিংহধ্বজ ছিল তা নামিয়ে ফেলে অর্জুন বিশ্বকর্মানির্মিত দৈবী মায়া ও কাঞ্চনময় ধ্বজ বসালেন, যার উপরে সিংহলাঙ্গুল বানর ছিল। অগ্নিদেবের আদেশে কয়েকজন ভূতও সেই ধ্বজে অধিষ্ঠিত হ’ল। তার পর