পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯২
মহাভারত

—শত্রুরও গুণ বলা উচিত, গুরুরও দোষ বলা উচিত, সর্বপ্রকারে সর্বপ্রযত্নে পুত্র ও শিষ্যকে হিতবাক্য বলা উচিত।

 দুর্যোধন দ্রোণাচার্যের নিকট ক্ষমা চাইলেন। কর্ণ ভীষ্ম ও কৃপের অনুরোধে দ্রোণ প্রসন্ন হয়ে বললেন, অজ্ঞাতবাস শেষ না হ’লে অর্জুন আমাদের দর্শন দিতেন না। আজ গোধন উদ্ধার না করে তিনি নিবৃত্ত হবেন না। আপনারা এমন মন্ত্রণা দিন যাতে দুর্যোধনের অযশ না হয় কিংবা ইনি পরাজিত না হন।

 জ্যোতিষ গণনা ক’রে ভীষ্ম বললেন, তের বৎসর পূর্ণ হয়েছে এবং তা নিশ্চিতভাবে জেনেই অর্জুন এসেছেন। পাণ্ডবগণ ধর্মজ্ঞ, তাঁরা লোভী নন, অন্যায় উপায়ে তাঁরা রাজ্যলাভ করতে চান না। দুর্যোধন, যুদ্ধে একান্তসিদ্ধি হয় এমন আমি কদাপি দেখি নি, এক পক্ষের জীবন বা মৃত্যু, জয় বা পরাজয় অবশ্যই হয়। অর্জুন এসে পড়লেন, এখন যুদ্ধ করবে কিংবা ধর্মসম্মত কার্য করবে তা সত্বর স্থির কর।

 দুর্যোধন বললেন, পিতামহ, আমি পাণ্ডবদের রাজ্য ফিরিয়ে দেব না, অতএব যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হ’ন। ভীষ্ম বললেন, তা হলে আমি যা ভাল মনে করি তা বলছি শোন।—তুমি সৈন্যের এক-চতুর্থ ভাগ নিয়ে হস্তিনাপুরে যাও, আর এক-চতুর্থাংশ গরু নিয়ে চলে যাক। অবশিষ্ট অর্ধ ভাগ সৈন্য নিয়ে আমরা অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করব।

 দুর্যোধন একদল সৈন্য নিয়ে যাত্রা করলেন, গরু নিয়ে আর একদল সৈন্য গেল। তার পর দ্রোণ অশ্বত্থামা কৃপ কর্ণ ও ভীষ্ম ব্যূহ রচনা ক’রে যথাক্রমে সেনার মধ্যভাগে, বাম পার্শ্বে, দক্ষিণ পার্শ্বে, সম্মুখে ও পশ্চাতে অবস্থান করলেন।

১৪। কৌরবগণের পরাজয়

 দ্রোণ বললেন, অর্জুনের ধ্বজাগ্র দূর থেকে দেখা যাচ্ছে, তাঁর শঙ্খধ্বনির সঙ্গে ধ্বজস্থিত বানরও ঘোর গর্জন করছে। অর্জুন তাঁর গাণ্ডীব আকর্ষণ করছেন; এই তাঁর দুই বাণ এসে আমার চরণে পড়ল, এই আর দুই বাণ আমার কর্ণ স্পর্শ ক’রে চ’লে গেল। তিনি দুই বাণ দিয়ে আমাকে প্রণাম করলেন, আর দুই বাণে আমাকে কুশলপ্রশ্ন করলেন। অর্জুন দেখলেন, দ্রোণ ভীষ্ম কর্ণ প্রভৃতি রয়েছেন কিন্তু দুর্যোধন নেই। তিনি উত্তরকে বললেন, এই সৈন্যদল এখন থাকুক, আগে দুর্যোধনের সঙ্গে যুদ্ধ