পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরাটপর্ব
২৯৩

করব। নিরামিষ[১] যুদ্ধ হয় না, আমরা দুর্যোধনকে জয় ক’রে গোধন উদ্ধার ক’রে আবার এদিকে আসব।

 অজুর্নকে অন্যদিকে যেতে দেখে দ্রোণ বললেন, উনি দুর্যোধন ভিন্ন অন্য কাকেও চান না, চল, আমরা পশ্চাতে গিয়ে ওঁকে ধরব।

 পতঙ্গপালের ন্যায় শরজালে অর্জুন কুরুসৈন্য আচ্ছন্ন করলেন। তাঁর শঙ্খের শব্দে, রথচক্রের ঘর্ঘর রবে, গাণ্ডীবের টংকারে, এবং ধ্বজস্থিত অমানুষ ভূতগণের গর্জনে পৃথিবী কম্পিত হ’ল। অপহৃত গরুর দল ঊর্ধ্বপুচ্ছ হয়ে হম্বারবে মৎস্যরাজ্যের দক্ষিণ দিকে ফিরতে লাগল। গোধন জয় করে অর্জুন দুর্যোধনের অভিমুখে যাচ্ছিলেন এমন সময় কুরুপক্ষীয় অন্যান্য বীরগণকে দেখে তিনি উত্তরকে বললেন, কর্ণের কাছে রথ নিয়ে চল।

 দুর্যোধনের ভ্রাতা বিকর্ণ এবং আরও কয়েকজন যোদ্ধা কর্ণকে রক্ষা করতে এলেন, কিন্তু অর্জুনের শরে বিধ্বস্ত হয়ে পালিয়ে গেলেন। কর্ণের ভ্রাতা সংগ্রামজিৎ নিহত হলেন, কর্ণও অর্জুনের বজ্রতুল্য বাণে নিপীড়িত হয়ে যুদ্ধের সম্মুখ ভাগ থেকে প্রস্থান করলেন।

 ইন্দ্রাদি তেত্রিশ দেবতা এবং পিতৃগণ মহর্ষিগণ গন্ধর্বগণ প্রভৃতি বিমানে ক’রে যুদ্ধ দেখতে এলেন। তাঁদের আগমনে যদ্ধভূমির ধূলি দূর হ’ল, দিব্যগন্ধ বায়ু বইতে লাগল। অর্জুনের আদেশে উত্তর কৃপাচার্যের কাছে রথ নিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর কৃপাচার্যের রথের চার অশ্ব অর্জুনের শরে বিদ্ধ হয়ে লাফিয়ে উঠল, কৃপ প’ড়ে গেলেন। তাঁর গৌরব রক্ষার জন্য অর্জুন আর শরাঘাত করলেন না; কিন্তু কৃপ আবার উঠে অর্জুনকে দশ বাণে বিদ্ধ করলেন, অর্জুনও কৃপের কবচ ধনু রথ ও অশ্ব বিনষ্ট করলেন, তখন অন্য যোদ্ধারা কৃপকে নিয়ে বেগে প্রস্থান করলেন।

 দ্রোণাচার্যের সম্মুখীন হয়ে অর্জুন অভিবাদন ক’রে স্মিতমুখে সবিনয়ে বললেন, আমরা বনবাস সমাপ্ত ক’রে শত্রুর উপর প্রতিশোধ নিতে এসেছি, আপনি আমাদের উপর ক্রুদ্ধ হ’তে পারেন না। আপনি যদি আগে আমাকে প্রহার করেন তবেই আমি প্রহার করব। দ্রোণ অর্জুনের প্রতি অনেকগুলি বাণ নিক্ষেপ করলেন। তখন দুজনে প্রবল যদ্ধ হ’তে লাগল, অর্জুনের বাণবর্ষণে দ্রোণ আচ্ছন্ন হলেন। অশ্বত্থামা বাধা দিতে এলেন। তিনি মনে মনে অর্জুনের প্রশংসা করলেন কিন্তু

  1. যে যুদ্ধে লোভ্য বা আকাঙ্ক্ষিত বস্তু নেই।