পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৪
মহাভারত

ক্রুদ্ধও হলেন। অর্জুন অশ্বত্থামার দিকে অগ্রসর হয়ে দ্রোণকে স’রে যাবার পথ দিলেন, দ্রোণ বিক্ষতদেহে বেগে প্রস্থান করলেন।

 অর্জুনের সঙ্গে কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর অশ্বত্থামার বাণ নিঃশেষ হয়ে গেল, তখন অর্জুন কর্ণের দিকে ধাবিত হলেন। দুজনে বহুক্ষণ যুদ্ধের পর অর্জুনের শরে কর্ণের বক্ষ বিদ্ধ হ’ল, তিনি বেদনায় কাতর হয়ে উত্তর দিকে পলায়ন করলেন। তার পর অর্জুন উত্তরকে বললেন, তুমি ওই হিরণ্ময় ধ্বজের নিকট রথ নিয়ে চল, ওখানে পিতামহ ভীষ্ম আমার প্রতীক্ষা করছেন। উত্তর বললেন, আমি বিহ্বল হয়েছি, আপনাদের অস্ত্রক্ষেপণ দেখে আমার বোধ হচ্ছে যেন দশ দিক ঘুরছে, বসা রুধির আর মেদের গন্ধে আমার মূর্ছা আসছে, ভয়ে হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে, আমার আর কশা ও বল্গা ধরবার শক্তি নেই। অর্জুন বললেন, ভয় পেয়ো না, স্থির হও, তুমিও এই যুদ্ধে অদ্ভুত কর্মকৌশল দেখিয়েছ। ধীর হয়ে অশ্বচালনা কর, ভীষ্মের নিকটে আমাকে নিয়ে চল, আজ তোমাকে আমার বিচিত্র অস্ত্রশিক্ষা দেখাব। উত্তর আশ্বস্ত হয়ে ভীষ্মরক্ষিত সৈন্যের মধ্যে রথ নিয়ে গেলেন।

 ভীষ্ম ও অর্জুন পরস্পরের প্রতি প্রাজাপত্য ঐন্দ্র আগ্নেয় বারুণ বায়ব্য প্রভৃতি দারুণ অস্ত্র নিক্ষেপ করতে লাগলেন। পরিশেষে ভীষ্ম শরাঘাতে অচেতনপ্রায় হলেন, তাঁর সারথি তাঁকে যুদ্ধভূমি থেকে সরিয়ে নিয়ে গেল। তার পর দুর্যোধন রথারোহণে এসে অর্জুনকে আক্রমণ করলেন। তিনি বহুক্ষণ যুদ্ধের পর বাণবিদ্ধ হয়ে রুধির বমন করতে করতে পলায়ন করলেন। অর্জুন তাঁকে বললেন, কীর্তি ও বিপুল যশ পরিত্যাগ ক’রে চ’লে যাচ্ছ কেন? তোমার দুর্যোধন নাম আজ মিথ্যা হ’ল, তুমি যুদ্ধ ত্যাগ করে পালাচ্ছ।

 অর্জুনের তীক্ষ্ণ বাক্য শুনে দুর্যোধন ফিরে এলেন। ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ প্রভৃতিও তাঁকে রক্ষা করতে এলেন এবং অর্জুনকে বেষ্টন ক’রে সর্বদিক থেকে শরবর্ষণ করতে লাগলেন। তখন অর্জুন ইন্দ্রদত্ত সম্মোহন অস্ত্র প্রয়োগ করলেন, কুরু পক্ষের সকলের সংজ্ঞা লুপ্ত হ’ল। উত্তরার অনুরোধ স্মরণ করে অর্জুন বললেন, উত্তর, তুমি রথ থেকে নেমে দ্রোণ আর কৃপের শুক্ল বস্ত্র, কর্ণের পীত বস্ত্র, এবং অশ্বত্থামা ও দুর্যোধনের নীল বস্ত্র খুলে নিয়ে এস। ভীষ্ম বোধ হয় সংজ্ঞাহীন হন নি, কারণ তিনি আমার অস্ত্র প্রতিষেধের উপায় জানেন, তুমি তাঁর বাম দিক দিয়ে যাও। দ্রোণ প্রভৃতির বস্ত্র নিয়ে এসে উত্তর পুনর্বার রথে উঠলেন এবং অর্জুনকে নিয়ে রণভূমি থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন।

 অর্জুনকে যেতে দেখে ভীষ্ম তাঁকে শরাঘাত করলেন, অর্জুন ভীষ্মের