পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৬
মহাভারত

ধ্বজস্থিত মহাকপি ও ভূতগণ আকাশে চ’লে গেল, দৈবী মায়াও অন্তর্হিত হ’ল। উত্তর রথের উপরে পূর্বের ন্যায় সিংহধ্বজ বসিয়ে দিলেন এবং পাণ্ডবগণের অস্থাদি শমীবৃক্ষে রেখে রথ চালালেন। নগরের পথে এসে অর্জুন বললেন, রাজপুত্র, দেখ, গোপালকগণ তোমাদের সমস্ত গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখানে অশ্বদের স্নান করিয়ে জল খাইয়ে বিশ্রামের পর অপরাহ্নে বিরাটনগরে যাব। তুমি কয়েকজন গোপকে ব’লে দাও তারা শীঘ্র নগরে গিয়ে তোমার জয় ঘোষণা করুক। অর্জুন আবার বৃহন্নলার বেশ ধারণ করলেন এবং অপরাহ্নে উত্তরের সারথি হয়ে নগরে যাত্রা করলেন।

 ওদিকে বিরাট রাজা ত্রিগর্তদের পরাজিত ক’রে চার জন পাণ্ডবের সঙ্গে রাজধানীতে ফিরে এলেন। তিনি শুনলেন, কৌরবরা রাজ্যের উত্তর দিকে এসে গোধন হরণ করেছে, রাজকুমার উত্তর বৃহন্নলাকে সঙ্গে নিয়ে ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ কর্ণ দুর্যোধন ও অশ্বত্থামার সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেছেন। বিরাট অত্যন্ত উদ্‌বিগ্ন হয়ে তাঁর সৈন্যদলকে বললেন, তোমরা শীঘ্র গিয়ে দেখ কুমার জীবিত আছেন কিনা; নপুংসক যার সারথি তার বাঁচা অসম্ভব মনে করি। যুধিষ্ঠির সহাস্যে বললেন, মহারাজ, বৃহন্নলা যদি সারথি হয় তবে শত্রুরা আপনার গোধন নিতে পারবে না, তার সাহায্যে আপনার পুত্র কৌরবগণকে এবং দেবাসুর প্রভৃতিকেও জয় করতে পারবেন।

 এমন সময় উত্তরের দূতরা এসে বিজয়সংবাদ দিলে। বিরাট আনন্দে রোমাঞ্চিত হয়ে মন্ত্রীদের আজ্ঞা দিলেন, রাজমার্গ পতাকা দিয়ে সাজাও, দেবতাদের পূজা দাও, কুমারগণ যোদ্ধগণ ও সালংকারা গণিকাগণ বাদ্যসহকারে আমার পুত্রের প্রত্যুদ্‌গমন করুক, হস্তীর উপরে ঘণ্টা বাজিয়ে সমস্ত চতুষ্পথে আমার জয় ঘোষণা করা হ’ক, উত্তম বেশভূষায় সজ্জিত হয়ে বহু কুমারীদের সঙ্গে উত্তরা বৃহন্নলাকে আনতে যাক। তার পর বিরাট বললেন, সৈরিন্ধ্রী, পাশা নিয়ে এস; কঙ্ক, খেলবে এস। যুধিষ্ঠির বললেন, মহারাজ, শুনেছি হৃষ্ট অবস্থায় দ্যূতক্রীড়া অনুচিত। দ্যূতে বহু দোষ, তা বর্জন করাই ভাল। পাণ্ডুপুত্র যুধিষ্ঠিরের কথা শুনে থাকবেন, তিনি তাঁর বিশাল রাজ্য এবং দেবতুল্য ভ্রাতাদেরও দ্যূতক্রীড়ায় হারিয়েছিলেন। তবে আপনি যদি নিতান্ত ইচ্ছা করেন তবে খেলব।

 খেলতে খেলতে বিরাট বললেন, দেখ, আমার পুত্র কৌরববীরগণকেও জয় করেছে। যুধিষ্ঠির বললেন, বৃহন্নলা যার সারথি সে জয়ী হবে না কেন। বিরাট ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, নীচ ব্রাহ্মণ, তুমি আমার পুত্রের সমান জ্ঞান ক’রে একটা