পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৮
মহাভারত

 উত্তর বললেন, আমি গোধন উদ্ধার করি নি, শত্রুজয়ও করি নি। আমি ভয় পেয়ে পালাচ্ছিলাম, এক দেবপুত্র আমাকে নিবারণ করলেন। তিনিই রথে উঠে ভীষ্মাদি ছয় রথীকে পরাস্ত ক’রে গোধন উদ্ধার করেছেন। সিংহের ন্যায় দৃঢ়কায় সেই যুবা কৌরবগণকে উপহাস ক’রে তাঁদের বসন হরণ করেছেন। বিরাট বললেন, সেই মহাবাহু দেবপুত্র কোথায়? উত্তর বললেন, পিতা, তিনি অন্তর্হিত হয়েছেন, বোধ হয় কাল বা পরশু দেখা দেবেন।

 বৃহন্নলাবেশী অর্জুন বিরাটের অনুমতি নিয়ে তাঁর কন্যা উত্তরাকে কৌরবগণের মহার্ঘ্য বিচিত্র সূক্ষ্ম বসনগুলি দিলেন। তার পর তিনি নির্জনে উত্তরের সঙ্গে মন্ত্রণা করে যুধিষ্ঠিরাদির আত্মপ্রকাশের উদ্‌যোগ করলেন।


॥ বৈবাহিকপর্বাধ্যায় ॥

১৬। পাণ্ডবগণের আত্মপ্রকাশ ― উত্তরা-অভিমন্যুর বিবাহ

 তিন দিন পরে পঞ্চপাণ্ডব স্নান করে শুক্ল বসন প’রে রাজযোগ্য আভরণে ভূষিত হলেন এবং যুধিষ্ঠিরকে পুরোবর্তী কবে বিরাট রাজার সভায় গিয়ে রাজাসনে উপবিষ্ট হলেন। বিরাট রাজকার্য করবার জন্য সভায় এসে তাঁদের দেখে সরোষে যুধিষ্ঠিরকে বললেন, কঙ্ক, তোমাকে আমি সভাসদ্ করেছি, তুমি রাজাসনে বসেছ কেন? অর্জুন সহাস্যে বললেন, মহারাজ, ইনি ইন্দ্রের আসনেও বসবার যোগ্য। ইনি মূর্তিমান ধর্ম, ত্রিলোকবিখ্যাত রাজর্ষি, ধৈর্যশীল সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়। ইনি যখন কুরুদেশে ছিলেন তখন দশ সহস্র হস্তী এবং কাঞ্চনমালাভূষিত অশ্বযুক্ত ত্রিশ সহস্র রথ এঁর পশ্চাতে যেত। ইনি বৃদ্ধ অনাথ অঙ্গহীন পঙ্গু প্রভৃতিকে পুত্রের ন্যায় পালন করতেন। এঁর ঐশ্বর্য ও প্রতাপ দেখে দুর্যোধন কর্ণ শকুনি প্রভৃতি সন্তপ্ত হতেন। সেই পুরুষশ্রেষ্ঠ যুধিষ্ঠির রাজার আসনে বসবেন না কেন?

 বিরাট বললেন, ইনি যদি কুন্তীপত্র যুধিষ্ঠির হন তবে এঁর ভ্রাতা ভীম অর্জুন নকুল সহদেব কাঁরা? যশস্বিনী দ্রৌপদীই বা কে? দ্যূতসভায় পাণ্ডবদের পরাজয়ের পর থেকে তাঁদের কোনও সংবাদ আমরা জানি না। অর্জুন বললেন, মহারাজ, সন্তান যেমন মাতৃগর্ভে বাস করে আমরা তেমনই আপনার ভবনে অজ্ঞাতবাস করেছি। এই ব’লে তিনি নিজেদের পরিচয় দিলেন।

 উত্তর পাণ্ডবগণকে একে একে দেখিয়ে বললেন, এই যে শোধিত স্বর্ণের