পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরাটপর্ব
২৯৯

ন্যায় গৌরবর্ণ বিশালকায় পুরুষ দেখছেন, যাঁর নাসিকা দীর্ঘ, চক্ষু তাম্রবর্ণ, ইনিই কুরুরাজ যুধিষ্ঠির। মত্ত গজেন্দ্রের ন্যায় যাঁর গতি, যিনি তপ্তকাঞ্চনবর্ণ স্থূলস্কন্ধ মহাবাহু, ইনিই বৃকোদর, এঁকে দেখুন, দেখুন। এঁর পার্শ্বে যে শ্যামবর্ণ সিংহস্কন্ধ গজেন্দ্রগামী আয়তলোচন যুবা রয়েছেন, ইনিই মহাধনুর্ধর অর্জুন। কুরুরাজ যুধিষ্ঠিরের নিকটে বিষ্ণু ও ইন্দ্রের ন্যায় যে দুজনকে দেখছেন, রূপে বলে ও চরিত্রে যাঁরা অতুলনীয়, এঁরাই নকুল-সহদেব। আর যাঁর কান্তি নীলোৎপলের ন্যায়, মস্তকে স্বর্ণাভরণ, যিনি মূর্তিমতী লক্ষ্মীর ন্যায় পাণ্ডবগণের পার্শ্বে রয়েছেন, ইনিই কৃষ্ণা।

 বিরাট তাঁর পুত্রকে বললেন, আমি যুধিষ্ঠিরকে প্রসন্ন করতে ইচ্ছা করি, যদি তোমার মত হয় তবে অর্জুনকে আমার কন্যাদান করব। ধর্মাত্মা যুধিষ্ঠির, আমরা না জেনে যে অপরাধ করেছি তা ক্ষমা করুন। আমার এই রাজ্য এবং যা কিছু আছে সমস্তই আপনাদের। সব্যসাচী ধনঞ্জয় উত্তরাকে গ্রহণ করুন, তিনিই তার যোগ্য ভর্তা।

 যুধিষ্ঠির অর্জুনের দিকে চাইলেন। অর্জুন বললেন, মহারাজ, আপনার দুহিতাকে আমি পত্রবধূ রূপে গ্রহণ করব, এই সম্বন্ধ আমাদের উভয় বংশেরই যোগ্য হবে। বিরাট বললেন, আপনাকে আমার কন্যা দিচ্ছি, আপনিই তাকে ভার্যা রূপে নেবেন না কেন? অর্জুন বললেন, অন্তঃপুরে আমি সর্বদাই আপনার কন্যাকে দেখেছি, সে নির্জনে ও প্রকাশ্যে আমাকে পিতার ন্যায় বিশ্বাস করেছে। নৃত্যগীত শিখিয়ে আমি তার প্রীতি ও সম্মানের পাত্র হয়েছি, সে আমাকে আচার্যতুল্য মনে করে। আমি এক বৎসর আপনার বয়স্থা কন্যার সঙ্গে বাস করেছি, আমি তাকে বিবাহ করলে লোকে অন্যায় সন্দেহ করতে পারে; এই কারণে আপনার কন্যাকে আমি পত্রবধূ রূপে চাচ্ছি, তাতে লোকে বুঝবে যে আমি শুদ্ধস্বভাব জিতেন্দ্রিয়, আপনার কন্যারও অপবাদ হবে না। পুত্র বা ভ্রাতার সঙ্গে বাস যেমন নির্দোষ, পুত্রবধূ ও দুহিতার সঙ্গে বাসও সেইরূপ। আমার পুত্র মহাবাহু অভিমন্যু, কৃষ্ণের ভাগিনেয়, দেববালকের ন্যায় রূপবান, অল্প বয়সেই অস্ত্রবিশারদ, সে আপনার উপযুক্ত জামাতা।

 অর্জুনের প্রস্তাবে বিরাট সম্মত হলেন, যুধিষ্ঠিরও অনুমোদন করলেন। তার পর সকলে বিরাটরাজ্যের অন্তর্গত উপপ্লব্য নগরে গেলেন এবং আত্মীয়স্বজনকে নিমন্ত্রণ করে পাঠালেন। দ্বারকা থেকে কৃষ্ণ বলরাম কৃতবর্মা ও সাত্যকি সুভদ্রা ও অভিমন্যুকে নিয়ে এলেন। ইন্দ্রসেন প্রভৃতি ভৃত্যরাও পাণ্ডবদের রথ নিয়ে