পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩০৫

দশ কোটি যোদ্ধা নিলেন এবং পরম আনন্দে মনে করলেন যেন কৃষ্ণকেই পেয়েছেন। তার পর বলরামের কাছে গিয়ে দুর্যোধন তাঁর আসবার কারণ জানালেন। বলরাম বললেন, বিরাটভবনে বিবাহের পর আমি যা বলেছিলাম তা বোধ হয় তুমি জান। তোমার জন্যই আমি বার বার কৃষ্ণকে বাধা দিয়ে বলেছিলাম যে দুই পক্ষের সঙ্গেই আমাদের সমান সম্বন্ধ। কিন্তু তিনি আমার মত গ্রহণ করেন নি, আমিও তাঁকে ছেড়ে ক্ষণকালও থাকতে পারি না। কৃষ্ণের মতিগতি দেখে আমি স্থির করেছি যে আমি পার্থের সহায় হব না, তোমারও সহায় হব না। পুরুষশ্রেষ্ঠ, তুমি মহামান্য ভরতবংশে জন্মেছ, যাও, ক্ষত্রধর্ম অনুসারে যুদ্ধ কর। দুর্যোধন বলরামকে আলিঙ্গন ক’রে বিদায় নিলেন। তিনি মনে করলেন যে কৃষ্ণ তাঁর বশে এসেছেন, যুদ্ধেও তাঁর জয় হয়েছে। তার পর তিনি কৃতবর্মা[১]র সঙ্গে দেখা করলেন এবং তাঁর কাছে এক অক্ষৌহিণী সৈন্য লাভ করলেন।

 দুর্যোধন চ’লে গেলে কৃষ্ণ অর্জুনকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি যুদ্ধ করব না তথাপি তুমি আমাকে বরণ করলে কেন? অর্জুন বললেন, নরোত্তম, তুমি একাকীই আমাদের সমস্ত শত্রু সংহার করতে পার এবং তোমার যশও লোকবিখ্যাত। আমিও শত্রুসংহারে সমর্থ এবং যশের প্রার্থী, এই কারণেই তোমাকে বরণ করেছি। আমার চিরকালের ইচ্ছা তুমি আমার সারথি হবে, এই কার্যে তুমি সম্মত হও। বাসুদেব বললেন, পার্থ, তুমি যে আমার সঙ্গে স্পর্ধা কর তা তোমারই উপযুক্ত। আমি সারথি হযে তোমার ইচ্ছা পূর্ণ করব। তার পর কৃষ্ণ ও দাশার্হ[২] বীরগণের সঙ্গে অর্জুন আনন্দিতমনে যুধিষ্ঠিরের কাছে ফিরে এলেন।

৩। শল্য, দুর্যোধন ও যুধিষ্ঠির

 আমন্ত্রণ পেয়ে মদ্ররাজ শল্য[৩] তাঁর বৃহৎ সৈন্যদল ও মহাবীর পুত্রগণকে নিয়ে পাণ্ডবগণের নিকট যাচ্ছিলেন। এই সংবাদ শুনে দুর্যোধন পথিমধ্যে তাঁর সংবর্ধনার উদ্‌যোগ করলেন। তাঁর আদেশে শিল্পিগণ স্থানে স্থানে বিচিত্র সভামণ্ডপ, কূপ, দীর্ঘিকা, পাকশালা প্রভৃতি নির্মাণ করলে। নানাপ্রকার ক্রীড়া এবং খাদ্যপানীয়েরও আয়োজন করা হ’ল। শল্য উপস্থিত হ’লে দুর্যোধনের সচিবগণ তাঁকে

  1. ভোজবংশীয় প্রধান বিশেষ। ইনি কৌরবদের পক্ষে ছিলেন।
  2. সাত্যকি প্রভৃতি।
  3. নকুল সহদেবের মাতুল।