পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১০
মহাভারত

প্রকাশিত হও এবং নিজ বলে পাপিষ্ঠ নহুষকে বধ ক’রে দেবরাজ্য শাসন কর।

 ইন্দ্র বললেন, বিক্রম প্রকাশের সময় এখনও আসেনি, নহুষ আমার চেয়ে বলবান, ঋষিরাও হব্য কব্য দিয়ে তার শক্তি বাড়িয়েছেন। তুমি নির্জনে নহুষকে এই কথা বল—জগৎপতি, আপনি ঋষিবাহিত যানে আমার নিকট আসুন, তা হ’লে আমি সানন্দে আপনার বশীভূত হব। শচী নহুষের কাছে গিয়ে বললেন, দেবরাজ, আপনি যদি আমার একটি ইচ্ছা পূর্ণ করেন তবে আপনার বশগামিনী হব। আপনি এমন বাহনে চড়ুন যা বিষ্ণু রুদ্র বা কোনও দেবতা বা রাক্ষসের নেই। আমার ইচ্ছা, মহাত্মা ঋষিগণ মিলিত হয়ে আপনার শিবিকা বহন করুন। নহুষ বললেন, বরবর্ণিনী, তুমি অপূর্ব বাহনের কথা বলেছ, আমি তোমার কথা রাখব।

 ঐরাবত প্রভৃতি দিব্য হস্তী, হংসযুক্ত বিমান ও দিব্যাশ্বযোজিত রথ ত্যাগ ক’রে নহুষ মহর্ষিগণকে তাঁর শিবিকাবহনে নিযুক্ত করলেন। তখন বৃহস্পতি অগ্নিকে বললেন, তুমি ইন্দ্রের অন্বেষণ কর। অগ্নি সর্বত্র অন্বেষণ ক’রে বললেন, ইন্দ্রকে কোথাও দেখলাম না, কেবল জল অবশিষ্ট আছে, কিন্তু তাতে প্রবেশ করলে আমি নির্বাপিত হব। অগ্নির স্তুতি ক’রে বৃহস্পতি বললেন, নিঃশঙ্কে জলে প্রবেশ কর, তোমাকে আমি সনাতন ব্রাহ্ম মন্ত্রে বর্ধিত করব। অগ্নি সর্বপ্রকার জলে অন্বেষণ ক’রে অবশেষে পদ্মের মৃণালমধ্যে ইন্দ্রকে দেখতে পেলেন এবং ফিরে এসে বৃহস্পতিকে জানালেন। তখন দেবতা ঋষি ও গন্ধর্বদের সঙ্গে বৃহস্পতি ইন্দ্রের কাছে গিয়ে স্তব ক’রে বললেন, মহেন্দ্র, তুমি দেবতা ও মনুষ্যকে রক্ষা কর, বল লাভ কর। স্তুত হ’য়ে ইন্দ্র ধীরে ধীরে বৃদ্ধিলাভ করলেন।

 দেবতারা নহুষবধের উপায় চিন্তা করছিলেন এমন সময় ভগবান অগস্ত্য ঋষি সেখানে এলেন। তিনি বললেন, পুরন্দর, ভাগ্যক্রমে তুমি শত্রুহীন হয়েছ, নহুষ দেবরাজ্য থেকে ভ্রষ্ট হয়েছেন। দেবর্ষি ও মহর্ষিগণ যখন নহুষকে শিবিকায় বহন করছিলেন, তখন এক সময়ে তাঁরা শ্রান্ত হয়ে নহুষকে প্রশ্ন করলেন, বিজয়িশ্রেষ্ঠ, ব্রহ্মা যে গোপ্রোক্ষণ (যজ্ঞে গোবধ) সম্বন্ধে মন্ত্র বলেছেন, তা তুমি প্রামাণিক মনে কর কি না? নহুষ মোহবশে উত্তর দিলেন না, ও মন্ত্র প্রামাণিক নয়। ঋষিরা বললেন, তুমি অধর্মে নিরত তাই ধর্ম বোঝ না। প্রাচীন মহর্ষিগণ এই মন্ত্র প্রামাণিক মনে করেন, আমরাও করি। ঋষিদের সঙ্গে বিবাদ করতে করতে নহুষ তাঁর পা দিয়ে আমার মাথা স্পর্শ করলেন। তখন আমি এই শাপ দিলাম মূঢ় তুমি ব্রহ্মর্ষিগণের অনুষ্ঠিত কর্মের দোষ দিচ্ছ, চরণ দিয়ে আমার মস্তক