পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১২
মহাভারত

মাহিষ্মতীরাজ নীল, অবন্তী দেশের দুই রাজা এবং অন্যান্য রাজারা সসৈন্যে উপস্থিত হলেন। দুর্যোধনের পক্ষে এগার অক্ষৌহিণী সেনা সংগৃহীত হ’ল। হস্তিনাপুরে তাদের স্থান হ’ল না; পঞ্চনদ, কুরুজাঙ্গল, রোহিতকারণ্য, মরুপ্রদেশ, অহিচ্ছত্র, কালকূট, গঙ্গাতীর, বারণ, বাটধান, যমুনাতীরস্থ পার্বত দেশ, সমস্তই কৌরবসৈন্যে ব্যাপ্ত হ’ল।


॥ সঞ্জয়যানপর্বাধ্যায়॥

৬। দ্রুপদ-পুরোহিতের দৌত্য

 দ্রুপদের পুরোহিত হস্তিনাপরে এলে ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্ম ও বিদুর তাঁর সংবর্ধনা করলেন। কুশলজিজ্ঞাসার পর পুরোহিত বললেন, আপনারা সকলেই সনাতন রাজধর্ম জানেন, তথাপি আমার বক্তব্যের অঙ্গরূপে কিছু বলব। ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডু একজনেরই পুত্র, পৈতৃক ধনে তাঁদের সমান অধিকার। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রগণ তাঁদের পৈতৃক ধন পেলেন, কিন্তু পাণ্ডুপুত্রগণ পেলেন না কেন? আপনারা জানেন, দুর্যোধন তা অধিকার ক’রে রেখেছেন। তিনি পাণ্ডবগণকে যমালয়ে পাঠাবার অনেক চেষ্টা করেছেন এবং শকুনির সাহায্যে তাঁদের রাজ্য হরণ করেছেন। এই ধৃতরাষ্ট্র পুত্রের কর্ম অনুমোদন ক’রে পাণ্ডবগণকে তের বৎসর নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। দ্যূতসভায় বনবাসে এবং বিরাটনগরে পাণ্ডবগণ ভার্যা সহ বহু ক্লেশ পেয়েছেন। এইসকল নির্যাতন ভুলে গিয়ে তাঁরা কৌরবগণের সঙ্গে সন্ধি করতে ইচ্ছা করেন। এখানে যে সুহৃদ্‌বর্গ রয়েছেন তাঁরা পাণ্ডবদের ও দুর্যোধনের আচরণ বিচার ক’রে ধৃতরাষ্ট্রকে অনুরোধ করুন। পাণ্ডবরা বিবাদ করতে চান না, লোকক্ষয় না ক’রেই নিজেদের প্রাপ্য চান। দুর্যোধন যে ভরসায় যুদ্ধ করতে চান তা মিথ্যা, কারণ পাণ্ডবরাই অধিকতর বলশালী। তাঁদের সাত অক্ষৌহিণী সেনা প্রস্তুত আছে, তার উপর সাত্যকি, ভীমসেন আর নকুল-সহদেব সহস্র অক্ষৌহিণীর সমান। আপনাদের পক্ষে যেমন এগার অক্ষৌহিণী আছে অপর পক্ষে তেমন অর্জুন আছেন। অর্জুন ও বাসুদেব সমস্ত সেনারই অধিক। সেনার বহুলতা, অর্জুনের বিক্রম এবং কৃষ্ণের বুদ্ধিমত্তা জেনে কোন লোক পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারে? অতএব আপনারা কালক্ষেপ করবেন না, ধর্ম ও নিয়ম অনুসারে যা পাণ্ডবগণের প্রাপ্য তা দিন।