পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৬
মহাভারত

রাজ্যলাভ উচিত হবে না। মানুষের জীবন অল্পকালস্থায়ী দুঃখময় ও অস্থির; যুদ্ধ করা আপনার যশের অনুরূপ নয়, অতএব আপনি পাপজনক যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হ’ন। জনার্দন সাত্যকি ও দ্রুপদ প্রভৃতি রাজারা চিরকালই আপনার অনুগত, এঁদের সাহায্যে পূর্বেই আপনি যুদ্ধ করে দুর্যোধনের দর্প চূর্ণ করতে পারতেন। কিন্তু বহু বৎসর বনে বাস করে বিপক্ষের শক্তি বাড়িয়ে এবং স্বপক্ষের শক্তি ক্ষয় ক’রে এখন যুদ্ধ করতে চাচ্ছেন কেন? আপনার পক্ষে ক্ষমাই ভাল, ভোগের ইচ্ছা ভাল নয়, ভীষ্ম দ্রোণ দুর্যোধন প্রভৃতিকে বধ ক’রে রাজ্য পেয়ে আপনার কি সুখ হবে? যদি আপনার অমাত্যবর্গই আপনাকে যুদ্ধে উৎসাহিত করেন, তবে তাঁদের হাতে সর্বস্ব দিয়ে আপনি সরে যান, স্বর্গের পথ থেকে ভ্রষ্ট হবেন না।

 যুধিষ্ঠির বললেন, সঞ্জয়, আমি ধর্ম করছি কি অধর্ম করছি তা জেনে আমার নিন্দা ক’রো। আপৎকালে ধর্মের পরিবর্তন হয়, বিদ্বান লোকে বুদ্ধিবলে কর্তব্য নির্ণয় করেন। কিন্তু বিপন্ন না হলে পরধর্ম আশ্রয় করা নিন্দনীয়, যদি আমরা তা ক’রে থাকি তবে আমাদের দোষ দিও। আমি পিতৃপিতামহের পথেই চলি। যদি সাম নীতি বর্জন করি (সন্ধিতে অসম্মত হই) তবে আমি নিন্দনীয় হব; যুদ্ধের উদ্‌যোগ ক’রে যদি ক্ষত্রিয়ের স্বধর্ম পালন না করি (যুদ্ধে বিরত হই) তা হ’লেও আমার দোষ হবে! মহাযশা বাসুদেব উভয়পক্ষের শুভার্থী, ইনিই বলুন আমাদের কর্তব্য কি।

 কৃষ্ণ বললেন, আমি দুই পক্ষেরই হিতাকাঙ্ক্ষী এবং শান্তি ভিন্ন আর কিছুর উপদেশ দিতে চাই না। যুধিষ্ঠির তাঁর শান্তিপ্রিয়তা দেখিয়েছেন, কিন্তু ধতরাষ্ট্র আর তাঁর পুত্ররা লোভী, অতএব কলহের বৃদ্ধি হবেই। যুধিষ্ঠির ক্ষত্রধর্ম অনুসারে নিজের রাজ্য উদ্ধারের জন্য উৎসাহী হয়েছেন, এতে তাঁর ধর্মলোপ হবে কেন? পাণ্ডবরা যদি এমন কোনও উপায় জানতেন যাতে কৌরবদের বধ না ক’রে রাজ্যলাভ করা যায় তবে এঁরা ভীমসেনকে দমন ক’রেও সেই উপায় অবলম্বন করতেন। পৈতৃক ক্ষত্রধর্ম অনুসারে যুদ্ধ করতে গিয়ে যদি ভাগ্যদোষে এঁদের মৃত্যু হয় তাও প্রশংসনীয় হবে। সঞ্জয়, তুমিই বল, ক্ষত্রিয় রাজাদের পক্ষে যুদ্ধ করা ধর্মসম্মত কিনা। দস্যুবধ করলে পুণ্য হয়, অধর্মজ্ঞ কৌরবগণ দস্যুবৃত্তিই অবলম্বন করেছেন। লোকদৃষ্টির অগোচরে বা প্রকাশ্যভাবে সবলে যে পরের ধন হরণ করে সে চোর। দুর্যোধনের সঙ্গে চোরের কি পার্থক্য আছে? পাণ্ডবগণের প্রিয়া ভার্যা দ্রৌপদীকে যখন দ্যূতসভায় আনা হয়েছিল তখন ভীষ্মাদি কিছুই বলেন নি, ধৃতরাষ্ট্রও বারণ করেন নি। দুঃশাসন যখন দ্রৌপদীকে শ্বশুরদের সমক্ষে