পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩২৩

বলত গদাযুদ্ধে আমার সমান পৃথিবীতে কেউ নেই। আমি এক আঘাতেই ভীমকে যমালয়ে পাঠাব। ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ অশ্বত্থামা কর্ণ ভূরিশ্রবা শল্য ভগদত্ত ও জয়দ্রথ—এঁদের যে কেউ পাণ্ডবদের বধ করতে পারেন, এঁরা সম্মিলিত হ’লে ক্ষণমধ্যেই তাদের যমালয়ে পাঠাবেন। কর্ণ ইন্দ্রের কাছ থেকে অমোঘ শক্তি অস্ত্র লাভ করেছেন; সেই কর্ণের সঙ্গে যুদ্ধে অর্জুন কি ক’রে বাঁচবেন? আমাদের যে দশ কোটি সংশপ্তক[১] সৈন্য আছে তারা প্রতিজ্ঞা করেছে—হয় আমরা অর্জুনকে মারব, না হয় তিনি আমাদের মারবেন। আমাদের এগার অক্ষৌহিণী সেনা, আর পাণ্ডবদের সাত, তবে আমাদের পরাজয় হবে কেন? বৃহস্পতি বলেছেন, শত্রুর সেনা যদি এক-তৃতীয়াংশ ন্যূন হয়, তবে তার সঙ্গে যুদ্ধ করবে। আমাদের সেনার আধিক্য বিপক্ষসেনার এক-তৃতীয়াংশকে অতিক্রম করে। মহারাজ, বিপক্ষের বল সর্বপ্রকারেই আমাদের তুলনায় হীন।

 ধৃতরাষ্ট্র বললেন, আমার পুত্র উন্মত্তের ন্যায় প্রলাপ বকছে, এ কখনও ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে জয় করতে পারবে না। পাণ্ডবদের বল ভীষ্ম যথার্থরূপে জানেন, সেজন্যই এঁর যুদ্ধে রুচি নেই। সঞ্জয়, যুদ্ধের জন্য পাণ্ডবগণকে কে উত্তেজিত করছে? সঞ্জয় বললেন, ধৃষ্টদ্যুম্ন; তিনিই পাণ্ডবগণকে উৎসাহ দিচ্ছেন। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, দুর্যোধন, যুদ্ধ হতে নিবৃত্ত হও অর্ধরাজ্যই তোমাদের জীবিকা নির্বাহের পক্ষে যথেষ্ট, পাণ্ডবগণকে তাদের ন্যায্য ভাগ দাও। আমি যুদ্ধ ইচ্ছা করি না, ভীষ্মদ্রোণাদিও করেন না।

 দুর্যোধন বললেন, আপনার অথবা ভীষ্মদ্রোণাদির ভরসায় আমি বল সংগ্রহ করি নি। আমি, কর্ণ ও দুঃশাসন, আমরা এই তিন জনেই পাণ্ডবদের বধ করব। আমি জীবন রাজ্য ও সমস্ত ধন ত্যাগ করব, কিন্তু পাণ্ডবদের সঙ্গে একত্র বাস করব না। তীক্ষ্ণ সূচীর অগ্রভাগ দিয়ে যে পরিমাণ ভূমি বিদ্ধ করা যায় তাও আমি পাণ্ডবদের ছেড়ে দেব না।

 ধৃতরাষ্ট্র বললেন, আমি দুর্যোধনকে ত্যাগ করলাম, সে যমালয়ে যাবে। যারা তার অনুগমন করবে তাদের জন্যই আমার শোক হচ্ছে। দেবগণ পাণ্ডবদের পিতা, তাঁরা পুত্রদের সাহায্য করবেন, ভীষ্মদ্রোণাদির প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হবেন। দেবতাদের সঙ্গে মিলিত হ’লে পাণ্ডবদের প্রতি কেউ দৃষ্টিপাত করতেও পারবে না।

 দুর্যোধন বললেন, দেবতারা কাম দ্বেষ লোভ দ্রোহ প্রভৃতি ত্যাগ ক’রেই


  1. যে মরণ পণ করে যুদ্ধ করে। দ্রোণপর্ব ৪-পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।