পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩২৫

॥ ভগবদ্‌যানপর্বাধ্যায়॥

১০। কৃষ্ণ, যুধিষ্ঠিরাদি ও দ্রৌপদীর অভিমত

 সঞ্জয় হস্তিনাপরে চ’লে গেলে যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে বললেন, তুমি ভিন্ন আর কেউ নেই যিনি আমাদের বিপদ থেকে ত্রাণ করতে পারেন। ধৃতরাষ্ট্র আর দুর্যোধনের অভিপ্রায় কি তা তুমি সঞ্জয়ের কথায় জেনেছ। লুব্ধ ধৃতরাষ্ট্র আমাদের রাজ্য ফিরিয়ে না দিয়েই শান্তি কামনা করছেন, তিনি স্বধর্ম দেখছেন না, স্নেহের বশে মূর্খ পুত্রের মতে চলছেন। জনার্দন, আমি আমার মাতা ও মিত্রগণকে পালন করতে পারছি না এর চেয়ে দুঃখ আর কি আছে? দ্রুপদ বিরাট প্রভৃতি রাজগণ এবং তুমি সহায় থাকতেও আমি শুধু পাঁচটি গ্রাম চেয়েছিলাম, কিন্তু দুরাত্মা দুর্যোধন তাও দেবে না। ধনশালী লোক ধনহীন হ'লে যত দুঃখ পায়, স্বভাবত নির্ধন লোক তত দুঃখ পায় না। আমরা কিছুতেই পৈতৃক সম্পত্তি ত্যাগ করতে পারি না, উদ্ধারের চেষ্টায় যদি আমাদের মৃত্যু হয় তাও ভাল। যুদ্ধ পাপজনক, তাতে দুই পক্ষেরই ক্ষতি হয়; যাঁরা সজ্জন ধীর ও দয়ালু, তাঁরাই যুদ্ধে মরেন, নিকৃষ্ট লোকেই বেঁচে থাকে। বৈর দ্বারা বৈরের নিবৃত্তি হয় না, বরং বৃদ্ধি হয়, যেমন ঘৃতযোগে অগ্নির হয়। আমরা রাজ্য ত্যাগ করতে চাই না, কুলক্ষয়ও চাই না। আমরা সর্বতোভাবে সন্ধির চেষ্টা করব, তা যদি বিফল হয় তবেই যুদ্ধ করব। কুকুর প্রথমে লাঙ্গুল চালনা, তার পর গর্জন, তার পর দন্তপ্রকাশ, তার পর যুদ্ধ করে, তাদের মধ্যে যে বলবান সেই মাংস ভক্ষণ করে। মানুষেরও এই স্বভাব, কোনও প্রভেদ নেই। মাধব, এখন কি করা উচিত? যাতে আমাদের স্বার্থ ও ধর্ম দুই রক্ষা হয় এমন উপায় তুমি বল, তোমার তুল্য সুহৃৎ আমাদের কেউ নেই।

 কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, আপনাদের দুই পক্ষের হিতার্থে আমি কৌরবসভায় যাব, যদি আপনাদের স্বার্থহানি না করে শান্তি স্থাপন করতে পারি তবে আমার মহাপুণ্য হবে। যুধিষ্ঠির বললেন, তুমি কৌরবদের কাছে যাবে এ আমার মত নয়। দুর্যোধন তোমার কথা রাখবে না, সে যদি তোমার প্রতি দুর্ব্যবহার করে তবে তা আমাদের অত্যন্ত দঃখকর হবে। কৃষ্ণ বললেন, দুর্যোধন পাপমতি তা আমি জানি, কিন্তু আমি যদি সন্ধির জন্য তাঁর কাছে যাই তবে অন্য লাভ না হলেও লোকে আমাদের যুদ্ধপ্রিয় ব’লে দোষ দেবে না, কৌরবগণ আমাকে ক্রুদ্ধ করতেও সাহস করবেন না।