পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৮
মহাভারত

সভায় গিয়ে প্রথমে মৃদুবাক্য বলবে, তার পর ভয় দেখাবে। তোমার কথা শুনে ভীষ্ম দ্রোণ বিদুর ও বাহ্ণীকরাজ অবশ্যই বুঝবেন কিসে সকলের শ্রেয় হবে এবং তাঁরা ধৃতরাষ্ট্র ও দুর্যোধনকেও বোঝাতে পারবেন।

 সহদেব বললেন, কৃষ্ণ, ধর্মরাজ যা বলেছেন তা সনাতন ধর্ম বটে, কিন্তু যাতে যুদ্ধ হয় তুমি তাই করবে, কৌরবরা শান্তি চাইলেও তুমি যুদ্ধ ঘটাবে। দ্যূতসভায় পাঞ্চালীর নিগ্রহের পর যদি দুর্যোধন নিহত না হয় তবে আমার ক্রোধ কি ক’রে শান্ত হবে? ধর্মরাজ আর ভীমার্জুন যদি ধর্ম নিয়েই থাকেন তবে আমি ধর্ম ত্যাগ ক’রে যুদ্ধ করব। মূর্খ দুর্যোধনকে তুমি ব’লো, আমরা হয় বনবাসের কষ্টভোগ করব নতুবা হস্তিনাপুরে রাজত্ব করব।

 সাত্যকি বললেন, মহামতি সহদেব সত্য বলেছেন, দুর্যোধন হত হ’লেই আমার ক্রোধের শান্তি হবে। রণকর্কশ বীর সহদেবের যে মত, সকল যোদ্ধারই সেই মত। সাত্যকির কথা শনে যোদ্ধারা চারিদিক থেকে সিংহনাদ ক’রে উঠলেন এবং সকলেই সাধু সাধু বললেন।

 অশ্রুপূর্ণ নয়নে দ্রৌপদী বললেন, মধুসূদন, তুমি জান যে দুর্যোধন শঠতা করে পাণ্ডবগণকে রাজ্যচ্যুত করেছে, ধৃতরাষ্ট্রের অভিপ্রায়ও সঞ্জয়ের মুখে শুনেছ। যুধিষ্ঠির পাঁচটি গ্রাম চেয়েছিলেন, দুর্যোধন সে অনুরোধও গ্রাহ্য করে নি। রাজ্য না দিয়ে সে যদি সন্ধি করতে চায় তবে তুমি সম্মত হয়ো না, পাণ্ডবগণ তাঁদের মিত্রদের সঙ্গে মিলিত হয়ে দুর্যোধনের সৈন্য বিনষ্ট করতে পারবেন। তুমি কৃপা ক’রো না, সাম বা দান নীতিতে যে শত্রু শান্ত হয় না তার উপর দণ্ডপ্রয়োগই বিধেয়। এই কার্য পাণ্ডবদের কর্তব্য, তোমার পক্ষে যশস্কর, ক্ষত্রিয়েরও সুখকর। ধর্মজ্ঞরা জানেন, অবধ্যকে বধ করলে যে দোষ হয় বধ্যকে বধ না করলে সেই দোষ হয়। জনার্দন, যজ্ঞবেদী থেকে আমার উৎপত্তি, আমি দ্রুপদরাজের কন্যা, ধৃষ্টদ্যুম্নের ভগিনী, তোমার প্রিয়সখী, মহাত্মা পাণ্ডুর পুত্রবধূ, পঞ্চ ইন্দ্রতুল্য পঞ্চ পাণ্ডবের মহিষী; আমার মহারথ পঞ্চ পুত্র তোমার কাছে অভিমন্যুরই সমান। কেশব, তোমরা জীবিত থাকতে আমি দ্যূতসভায় পাণ্ডবদের সমক্ষেই নিগৃহীত হয়েছি, এঁদের নিশ্চেষ্ট দেখে আমি ‘গোবিন্দ রক্ষা কর’ ব’লে তোমাকে স্মরণ করেছি। অবশেষে ধৃতরাষ্ট্রের বরে এঁরা দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে বনবাসে যাত্রা করেন। ধিক অর্জুনের ধনুর্ধারণ, ধিক ভীমসেনের বল, দুর্যোধন মুহূর্তকালও জীবিত আছে!

 তার পর অসিতনয়না কৃষ্ণা তাঁর সুবাসিত সুন্দর বক্রাগ্র মহাভূজঙ্গসদৃশ বেণী বাম হস্তে ধ’রে কৃষ্ণের কাছে গিয়ে বললেন, পুণ্ডরীকাক্ষ, তুমি যখন সন্ধির