পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩০
মহাভারত

আশ্বস্ত ক’রো। আমরা যখন বনে যাই তখন তিনি সরোদনে আমাদের পশ্চাতে ধাবিত হয়েছিলেন, আমরা তাঁকে পরিত্যাগ করে প্রস্থান করেছিলাম। তুমি ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ ও অশ্বত্থামা এবং বয়োজ্যেষ্ঠ রাজগণকে আমাদের হয়ে অভিবাদন করো, মহাপ্রাজ্ঞ বিদুরকে আলিঙ্গন ক’রো।

 অর্জুন বললেন, গোবিন্দ, দুর্যোধন যদি তোমার কথায় অবজ্ঞা না ক’রে অর্ধরাজ্য আমাদের দেয় তবে আমরা সুখী হব, তা যদি না করে তবে তার পক্ষের সকল ক্ষত্রিয়কে আমি বিনষ্ট করব। এই কথা শুনে ভীম আনন্দিত হয়ে কম্পিত দেহে সগর্বে গর্জন ক’রে উঠলেন। সেই নিনাদ শুনে সৈন্যগণ কম্পিত হ’ল, হস্তী অশ্ব প্রভৃতি মলমূত্র ত্যাগ করলে।

 কৃষ্ণের সারথি দারুক দ্রুতবেগে রথ চালালেন। কিছুদূর যাবার পর নারদ দেবল মৈত্রেয় কৃষ্ণদ্বৈপায়ন পরশুরাম প্রভৃতি মহর্ষিগণ কৃষ্ণের কাছে এসে বললেন, মহামতি কৃষ্ণ, আমরা তোমার বাক্য ও তার প্রত্যুত্তর শোনবার জন্য কৌরবসভায় যাচ্ছি। তুমি নির্বিঘ্নে অগ্রসর হও, সভায় আবার আমরা তোমাকে দেখব। সূর্যাস্তকালে আকাশ লোহিতবর্ণ হ’লে কৃষ্ণ বুকস্থলগ্রামে পৌঁছলেন। পরিচারকগণ তাঁর রাত্রিবাসের জন্য সেখানে শিবিরস্থাপন ও খাদ্যপানীয় প্রস্তুত করলে। কৃষ্ণ স্থানীয় ব্রাহ্মণদের আমন্ত্রণ ক’রে ভোজন করালেন।


 কৃষ্ণ আসছেন এই সংবাদ দূতমুখে শুনে ধৃতরাষ্ট্র হৃষ্ট হয়ে তাঁর উপযুক্ত সংবর্ধনার জন্য পুত্রকে আদেশ দিলেন। দুর্যোধন নানা স্থানে সুসজ্জিত পটমণ্ডপ নির্মাণ এবং খাদ্য পেয় প্রভৃতির আয়োজন করলেন। কৃষ্ণ সে সকল উপেক্ষা করে কৌরবরাজধানীর দিকে চললেন।

 ধৃতরাষ্ট্র বিদুরকে বললেন, আমি কৃষ্ণকে অশ্বসমেত ষোলটি স্বর্ণ ভূষিত রথ, আটটি মদস্রাবী হস্তী, যাদের সন্তান হয় নি এমন এক শ রূপবতী দাসী, এক শ দাস এবং বহু কম্বল ও মৃগচর্ম উপহার দেব। এই উজ্জ্বল বিমল মণি যা দিনে ও রাত্রিতে দীপ্তি দেয়, এটিও দেব। দুর্যোধন ভিন্ন আমার সকল পুত্র ও পৌত্র, সালংকারা বারাঙ্গনাগণ এবং অনাবৃতমুখে কল্যাণীয়া কন্যাগণ কৃষ্ণর প্রত্যূদ্‌গমনের জন্য যাবে। ধ্বজপতাকায় নগর সাজানো হ’ক, পথে জল দেওয়া হ’ক।

 বিদুর বললেন, মহারাজ, আপনি সরল পথে চলুন, আমি বুঝতে পারছি আপনি ধর্মের জন্য বা কৃষ্ণের প্রিয়কামনায় উপহার দিচ্ছেন না, আপনার এই ভূরি-