পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩৩১

দক্ষিণা মিথ্যা ছল মাত্র। পাণ্ডবরা পাঁচটি গ্রাম চান, আপনি তাও দিতে প্রস্তুত নন, অথচ অর্থ দিয়ে কৃষ্ণকে স্বপক্ষে আনবার ইচ্ছা করছেন। ধনদান বা নিন্দা বা অন্য উপায়ে আপনি কৃষ্ণার্জুনের মধ্যে ভেদ ঘটাতে পারবেন না। পূর্ণ কুম্ভ, পাদপ্রক্ষালনের জল এবং কুশলপ্রশ্ন ভিন্ন জনার্দন কিছুই গ্রহণ করবেন না। তিনি কুরু পাণ্ডবের মঙ্গলকামনায় আসছেন, আপনি তাঁর সেই কামনা পূর্ণ করুন।

 দুর্যোধন বললেন, বিদুর সত্য বলেছেন, কৃষ্ণ পাণ্ডবদের প্রতি অনুরক্ত, তাঁকে আমাদের পক্ষে আনা যাবে না। তিনি নিশ্চয়ই পূজার্হ, কিন্তু দেশ কাল বিবেচনা ক’রে তাঁকে এখন মহার্ঘ উপহার দেওয়া উচিত নয়, তিনি মনে করবেন আমরা ভয় পেয়েছি। আমরা যুদ্ধে উদ্‌যোগী হয়েছি, যুদ্ধ ভিন্ন শান্তি হবে না।

 কুরুপিতামহ ভীষ্ম বললেন, তোমরা কৃষ্ণের সমাদর কর বা না কর তিনি ক্রুদ্ধ হবেন না, কিন্তু তাঁকে যেন অবজ্ঞা করা না হয়। তিনি যা বলবেন বিশ্বস্তচিত্তে তোমাদের তাই করা উচিত। তিনি ধর্মসংগত ন্যায্য কথাই বলবেন, তোমরাও তাঁকে প্রিয়বাক্য ব’লো।

 দুর্যোধন বললেন, আমি পাণ্ডবদের সঙ্গে মিলিত হয়ে রাজ্যভোগ করতে পারব না। যা স্থির করেছি শুনুন—আমি জনার্দনকে আবদ্ধ ক’রে রাখব, তা হলে যাদবগণ পাণ্ডবগণ এবং সমস্ত পৃথিবী আমার বশে আসবে।

 দুর্যোধনের এই দুরভিসন্ধি শুনে ধৃতরাষ্ট্র বললেন, এমন ধর্ম বিরুদ্ধে কথা ব’লো না, হৃষীকেশ দূত হয়ে আসছেন, তার উপর তিনি তোমার বৈবাহিক, আমাদের প্রিয় এবং নিরপরাধ। ভীষ্ম বললেন, ধৃতরাষ্ট্র, তোমার দুর্বুদ্ধি পুত্র কেবল অনর্থ বরণ করে, তুমিও এই পাপাত্মার অনুসরণ করছ। কৃষ্ণকে বন্ধন করলে দুর্যোধন তার অমাত্য সহ ক্ষণমধ্যে বিনষ্ট হবে। এই ব’লে ভীষ্ম অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে সভা ত্যাগ ক’রে চ’লে গেলেন।


 প্রাতঃকালে কৃষ্ণ বৃকস্থল ত্যাগ করে হস্তিনাপুরে এলেন। দুর্যোধনের ভ্রাতারা এবং ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ প্রভৃতি অগ্রসর হয়ে তাঁর প্রত্যুদ্‌গমন করলেন। রাজপথে বহু লোক কৃষ্ণের স্তুতি করতে লাগল, বরনারীগণ উপর থেকে দেখতে লাগলেন, তাঁদের ভারে অতিবৃহৎ অট্টালিকাও যেন স্থানচ্যুত হল। তিন কক্ষ্যা (মহল) অতিক্রম ক’রে কৃষ্ণ ধৃতরাষ্ট্রের কাছে গেলেন। ধৃতরাষ্ট্রাদি সকলেই গাত্রোত্থান ক’রে সংবর্ধনা করলেন। পুরোহিতগণ যথাবিধি গো মধুপর্ক ও জল দিয়ে কৃষ্ণের সৎকার করলেন।