পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৪
মহাভারত

পাণ্ডবদের উপর আমার যে প্রীতি আছে তারও অধিক প্রীতি তোমার উপর আছে, সেজন্যই এই কথা বলছি।

 কৃষ্ণ বললেন, আপনার কথা মহাপ্রাজ্ঞ বিচক্ষণ এবং পিতামাতার ন্যায় হিতৈষী ব্যক্তিরই উপযুক্ত। আমি দুর্যোধনের দুষ্ট স্বভাব এবং তার অনুগত রাজাদের শত্রুতা জেনেও এখানে এসেছি। মৃত্যুপাশ থেকে পৃথিবীকে যে মুক্ত করতে পারে সে মহান ধর্ম লাভ করে। মানুষ যদি ধর্মকার্যে যথাসাধ্য যত্ন করে তবে সম্পন্ন করতে না পারলেও তার পুণ্য হয়। আবার, কেউ যদি মনে মনে পাপচিন্তা করে কিন্তু কার্যত করে না তবে সে পাপের ফল পায় না, ধর্মজ্ঞগণ এইরূপ বলেন। আমি কুরুপাণ্ডবের মধ্যে শান্তিস্থাপনের যথাসাধ্য চেষ্টা করব, যাতে তাঁরা যুদ্ধে বিনষ্ট না হন। জ্ঞাতিদের মধ্যে ভেদ হ’লে যিনি সর্বপ্রযত্নে মধ্যস্থতা না করেন তাঁকে মিত্র বলা যায় না। আমি শান্তির চেষ্টা করলে কোনও শত্রু বা মূর্খ লোক বলতে পারবে না যে কৃষ্ণ ক্রুদ্ধ কুরুপাণ্ডবগণকে বারণ করলেন না। দুর্যোধন যদি আমার ধর্ম সম্মত হিতকর কথা না শোনেন তবে তিনি কালের কবলে পড়বেন।

১৩। কৌরবসভায় কৃষ্ণের অভিভাষণ

 পরদিন প্রভাতকালে সুকণ্ঠ সূতমাগধগণের বন্দনায় এবং শঙ্খ ও দুন্দুভির রবে কৃষ্ণের নিদ্রাভঙ্গ হ’ল। তাঁর প্রাতঃকৃত্য শেষ হ’লে দুর্যোধন ও শকুনি তাঁর কাছে এসে বললেন, রাজা ধৃতরাষ্ট্র ও ভীষ্ম প্রভৃতি তোমার প্রতীক্ষা করছেন। কৃষ্ণ অগ্নি ও ব্রাহ্মণগণকে প্রদক্ষিণ করলেন এবং কৌস্তুভ মণি ধারণ ক’রে বিদুরকে নিয়ে রথে উঠলেন। দুর্যোধন শকুনি এবং সাত্যকি প্রভৃতি রথে গজে ও অশ্বে অনুর্গমন করলেন। বহু সহস্র অস্ত্রধারী সৈন্য কৃষ্ণের অগ্রে এবং বহু হস্তী ও রথ তাঁর পশ্চাতে গেল। রাজসভার নিকট এসে কৃষ্ণের অনুচরগণ শঙ্খ ও বেণুর রবে সর্বদিক নিনাদিত করলে। বিদুর ও সাত্যকির হাত ধ’রে কৃষ্ণ সভাদ্বারে রথ থেকে নামলেন। তিনি সভায় প্রবেশ করলে ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্ম দ্রোণাদি এবং সমস্ত রাজারা সসম্মানে গাত্রোত্থান করলেন।

 ধৃতরাষ্ট্রের আদেশে সর্বতোভদ্র নামে একটি স্বর্ণভূষিত আসন কৃষ্ণের জন্য রাখা ছিল। সকলকে যথাযোগ্য সম্ভাষণ ক’রে কৃষ্ণ ভীষ্মকে বললেন, নারদাদি ঋষিগণ অন্তরীক্ষে রয়েছেন, তাঁরা এই রাজসভা দেখতে এসেছেন; তাঁদের সংবর্ধনা ক’রে আসন দিন, তাঁরা না বসলে আমরা কেউ বসতে পারি না। ভীষ্মের আদেশে