পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপৰ্ব
৩৫৩

সকলেই বলবে আমি ভয় পেয়ে এমন করেছি। কেউ জানে না যে আমি পাণ্ডবদের ভ্রাতা। এখন যুদ্ধকালে যদি আমি পাণ্ডবপক্ষে যাই তবে ক্ষত্রিয়রা আমাকে কি বলবেন? ধার্তরাষ্ট্রগণ আমার সর্ব কামনা পূর্ণ করেছেন, আমাকে সম্মানিত করেছেন, এখন আমি কি করে তা নিষ্ফল করতে পারি? যাঁরা আমাকে শ্রদ্ধা করেন, যাঁরা আমার ভরসাতেই শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাবেন, তাঁদের মনোরথ আমি কি করে ছিন্ন করব? যে সকল অস্থিরমতি পাপাত্মা রাজার অনুগ্রহে পুষ্ট ও কৃতার্থ হয়ে কার্যকালে কর্তব্য পালন করে না, সেই কৃতঘ্নদের ইহলোক নেই পরলোকও নেই। আমি সৎপুরুষোচিত অনৃশংসতা ও চরিত্র রক্ষা ক’রে আপনার পুত্রদের সঙ্গে যথাশক্তি যুদ্ধ করব, আপনার বাক্য হিতকর হলেও তা পালন করতে পারি না। কিন্তু আপনার আগমন ব্যর্থ হবে না, সমর্থ হ’লেও আমি আপনার সকল পুত্রকে বধ করব না। কেবল অর্জুনকে নিহত ক’রে অভীষ্ট ফল লাভ করব, অথবা তাঁর হাতে নিহত হয়ে যশোলাভ করব। যশস্বিনী, যেই মরুক, অর্জুন অথবা আমাকে নিয়ে আপনার পাঁচ পুত্রই থাকবে।

 শোকার্তা কুন্তী কম্পিতদেহে পুত্রকে আলিঙ্গন করে বললেন, কর্ণ, তুমি যা বললে তাই হবে, কুরুকুলের ক্ষয় হবে, দৈবই প্রবল। অর্জুন ভিন্ন অন্য চার ভ্রাতাকে তুমি অভয় দিয়েছ এই প্রতিজ্ঞা মনে রেখো।

 কুন্তী শুভাশীর্বাদ করলেন, কর্ণও তাঁকে অভিবাদন করলেন, তারপর দুজনে দুদিকে চ’লে গেলেন।

২১। কৃষ্ণের প্রত্যাবর্তন

 উপপ্লব্য নগরে ফিরে এসে কৃষ্ণ তাঁর দৌত্যের বিবরণ যুধিষ্ঠিরকে জানিয়ে বললেন, আমি দুর্যোধনকে মিষ্টবাক্যে অনুরোধ করেছি, তার পর সভাস্থ রাজাদের ভর্ৎসনা করেছি, দুর্যোধনকে তৃণতুল্য অবজ্ঞা ক’রে কর্ণ ও শকুনিকে ভয় দেখিয়েছি, দ্যূতসভায় ধার্তরাষ্ট্রগণের আচরণের বহু নিন্দা করেছি। অবশেষে দুর্যোধনকে বলেছি, পাণ্ডবগণ অভিমান ত্যাগ ক’রে ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্ম ও বিদুরের আজ্ঞাধীন হয়ে থাকবেন, নিজের রাজ্যাংশ শাসনের ভারও তোমার হাতে দেবেন; ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্ম ও বিদুর তোমাকে যে হিতকর উপদেশ দিয়েছেন তা পালন কর। অন্তত পাণ্ডবদের পাঁচটি গ্রাম দাও, কারণ তাঁদের ভরণ করা ধৃতরাষ্ট্রের কর্তব্য। তার পর কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, আপনাদের জন্য আমি কৌরব সভায় সাম দান ও ভেদ নীতি অনুসারে বহু