পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫৪
মহাভারত

চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনও ফল হয়নি। এখন চতুর্থ নীতি দণ্ড ছাড়া আর কোনও উপায় দেখি না। কৌরবপক্ষের রাজারা বোধ হয় এখন বিনাশের নিমিত্ত কুরুক্ষেত্রে যাত্রা করেছেন। দুর্যোধনাদি বিনা যুদ্ধে আপনাকে রাজ্য দেবেন না।


॥ সৈন্যনির্যাণপবাধ্যায়॥

২২। পাণ্ডবযুদ্ধসজ্জা

 যুধিষ্ঠির তাঁর ভ্রাতাদের বললেন, তোমরা কেশবের কথা শুনলে, এখন সেনা বিভাগ কর। সাত অক্ষৌহিণী এখানে সমবেত হয়েছে, তাদের নায়ক—দ্রুপদ, বিরাট, ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডী, সাত্যকি, চেকিতান ও ভীমসেন। এরা সকলেই যুদ্ধবিশারদ বীর এবং প্রাণ দিতে প্রস্তুত। সহদেব, তোমার মতে যিনি এই সাত জনের নেতা হবার যোগ্য, যিনি সেনাবিভাগ করতে জানেন এবং যুদ্ধে ভীষ্মের প্রতাপ সইতে পারবেন, তাঁর নাম বল।

 সহদেব বললেন, মৎস্যরাজ বিরাটই এই কার্যের যোগ্য। ইনি আমাদের সুখে সুখী দুঃখে দুঃখী, বলবান ও অস্ত্রবিশারদ, এঁর সাহায্যেই আমরা রাজ্য উদ্ধার করব। নকুল বললেন, আমাদের শ্বশুর দ্রুপদই সেনানায়ক হবার যোগ্য, ইনি বয়সে ও কুলমর্যাদায় শ্রেষ্ঠ, ভরদ্বাজের কাছে অস্ত্রশিক্ষা করেছিলেন এবং সর্বদা দ্রোণ ও ভীষ্মের সহিত স্পর্ধা করেন। দ্রোণের বিনাশকামনায় ইনি ভার্যার সহিত ঘোর তপস্যা করেছিলেন[১]। অর্জুন বললেন, যে দিব্য পুরুষ তপস্যার প্রভাবে এবং ঋষিগণের অনুগ্রহে উৎপন্ন হয়েছিলেন, যিনি ধন, খড়্গ ও কবচ ধারণ ক’রে রথারোহণে অগ্নিকুণ্ড থেকে উঠেছিলেন, সেই ধৃষ্টদ্যুম্ন[১]ই সেনাপতিত্বের যোগ্য। ভীম বললেন, সিদ্ধগণ ও মহর্ষিগণ বলেন যে, দ্রুপদপুত্র শিখণ্ডীই ভীষ্মবধের নিমিত্ত জন্মেছেন, ইনি রামের ন্যায় রূপবান, এমন কেউ নেই যে এঁকে অস্ত্রাহত করতে পারে। এঁকেই সেনাপতি করুন।

 যুধিষ্ঠির বললেন, কৃষ্ণই আমাদের জয়পরাজয়ের মূল, আমাদের জীবন রাজ্য সুখদুঃখ সবই এঁর অধীন, ইনিই বলুন কে আমাদের সেনাপতি হবেন। এখন

  1. ১.০ ১.১ আদিপর্ব ২৯-পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।