পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩৫৫

রাত্রি আসন্ন, কাল প্রভাতে আমরা অধিবাস[১] ও কৌতুকমঙ্গল[২] ক’রে যদ্ধযাত্রা করব।

 অর্জুনের দিকে চেয়ে কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, যাঁদের নাম করা হ’ল তাঁরা সকলেই নেতৃত্ব করবার যোগ্য। আপনি এখন যথাবিধি সৈন্যযোজনা করুন, আপনার পক্ষে যে বীরগণ আছেন তাঁদের সম্মুখে দুর্যোধনাদি কখনও দাঁড়াতে পারবেন না। আমি ধৃষ্টদ্যুম্নকেই সেনাপতি মনোনীত করছি। কৃষ্ণের কথায় পাণ্ডবগণ আনন্দিত হলেন!

 যুদ্ধসজ্জা আরম্ভ হ’ল, সৈন্যগণ চঞ্চল হয়ে কোলাহল করতে লাগল, হস্তী ও অশ্বের রব, রথচক্রের ঘর্ঘর ও শঙ্খদুন্দুভির নিনাদে সর্ব দিক ব্যাপ্ত হ’ল। সেই বিশাল সৈন্যসমাগম মহাতরঙ্গময় সমুদ্রের ন্যায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। বর্মে ও অস্ত্রে সজ্জিত যোদ্ধারা আনন্দিত হয়ে চলতে লাগলেন, যুধিষ্ঠির তাঁদের মধ্যভাগে রইলেন, দুর্বল সৈন্য ও পরিচারকগণও তাঁর সঙ্গে চলল। শকট, বিপণি, বেশ্যাদের বস্ত্রগৃহ, কোষ, যন্ত্রায়ুধ ও চিকিৎসকগণ সঙ্গে সঙ্গে গেল। দ্রৌপদী তাঁর দাসদাসী ও অন্যান্য স্ত্রীদের নিয়ে উপপ্লব্য নগরেই রইলেন।

 পাণ্ডববাহিনী কুরুক্ষেত্রে উপস্থিত হ’ল। যুধিষ্ঠির শ্মশান, দেবালয়, মহর্ষিদের আশ্রম ও তীর্থস্থান পরিহার করলেন এবং যেখানে প্রচুর ঘাস ও কাঠ পাওয়া যায় এমন এক সমতল স্নিগ্ধ স্থানে সেনা সন্নিবেশ করলেন। পবিত্র হিরন্বতী নদীর নিকটে পরিখা খনন করিয়ে কৃষ্ণ সেখানে রাজাদের শিবির স্থাপন করলেন। শত শত বেতনভোগী শিল্পী এবং চিকিৎসার উপকরণ সহ বৈদ্যগণ শিবিরে রইলেন। প্রতি শিবিরে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, মধু, ঘৃত, সর্জরস (ধুনা), জল, ঘাস, তুষ ও অঙ্গার রাখা হ’ল।


 কৌরবসভায় যে কথাবার্তা হয়েছিল তার সম্বন্ধে যুধিষ্ঠির আরও জানতে চাইলে কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, দুর্বদ্ধি দুর্যোধন আপনার প্রস্তাব এবং ভীষ্ম বিদুর ও আমার কথা সমস্তই অগ্রাহ্য করেছে, কর্ণের ভরসায় সে মনে করে তার জয়লাভ হবেই। সে আমাকে বন্দী করবার আদেশ দিয়েছিল, কিন্তু তার ইচ্ছা পূর্ণ হয় নি। ভীষ্ম-দ্রোণও ন্যায়সংগত কথা বলেন নি, বিদুর ছাড়া সকলেই দুর্যোধনের অনুবর্তী।

  1. অস্ত্রপূজা বা নীরাজন।
  2. রক্ষাসূত্র বা রাখি-বন্ধন।