পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩৬১

তোমার গাণ্ডীব কোথায় ছিল? ভীমের বল কোথায় ছিল? তোমরা আমাদের দাস হয়েছিলে, দ্রৌপদীই তোমাদের মুক্ত করেন। তুমি নপুংসক সেজে বেণী দুলিয়ে বিরাটকন্যাকে নৃত্য শেখাতে। এখন কৃষ্ণের সঙ্গে এসে যুদ্ধ কর, আমি তোমাদের ভয় করি না। সহস্র সহস্র বাসুদেব এবং শত শত অর্জুনও আমার অব্যর্থ বাণের প্রহারে দশ দিকে পলায়ন করবে।


 উলূক পাণ্ডবশিবিরে গিয়ে দুর্যোধনের সকল কথা জানালেন। ভীমকে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ দেখে কৃষ্ণ সহাস্যে বললেন, শকুনিনন্দন, শীঘ্র ফিরে যাও, দুর্যোধনকে জানিও যে তাঁর সব কথা আমরা শুনেছি, অর্থও বুঝেছি, তিনি যা ইচ্ছা করেছেন তাই হবে। ভীম বললেন, মূর্খ, তুমি দুর্যোধনকে বলবে, আমি দুঃশাসনের রক্তপান ক’রে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করব। আর উলূক, তোমার পিতার সমক্ষে আগে তোমাকে বধ করব তার পর সেই পাপিষ্ঠকে বধ করব।

 অর্জন সহাস্যে বললেন, ভীমসেন, যাদের সঙ্গে আপনার শত্রুতা তারা এখানে নেই, উলূককে নিষ্ঠুর কথা বলা আপনার উচিত নয়। উলূক, দুর্যোধন যে গর্বিত বাক্য বলেছেন, কাল সৈন্যদের সম্মুখে গাণ্ডীব দ্বারা আমি তার প্রত্যুত্তর দেব। যুধিষ্ঠির বললেন, বৎস শকুনিপুত্র উলূক, তুমি দুর্যোধনকে বলবে, যে লোক পরস্ব হরণ করে এবং নিজের শক্তিতে তা রাখতে না পেরে অপরের সাহায্য নেয়, সে নপুংসক। দুর্যোধন, তুমি পরের বলে নিজেকে প্রবল মনে ক’রে গর্জন করছ কেন? অর্জুন বললেন, উলূক, দুর্যোধনকে বলবে, তুমি মহাপ্রাজ্ঞ ভীষ্মকে যুদ্ধে নামিয়ে মনে করছ আমরা দয়াবশে তাঁকে মারব না। যাঁর ভরসায় তুমি গর্ব করছ সেই ভীষ্মকে আমি প্রথমে বধ করব। বৃদ্ধ বিরাট ও দ্রুপদ বললেন, আমরা সাধুজনের দাসত্ব কামনা করি। আমরা দাস হই বা যাই হই, কার কত পৌরুষ আছে কাল দেখা যাবে। শিখণ্ডী বললেন, বিধাতা ভীষ্মবধের নিমিত্তই আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি তাঁকে রথ থেকে নিপাতিত করব। ধৃষ্টদ্যুম্ন বললেন, আমি দ্রোণকে সসৈন্যে সবান্ধবে বধ করব, আমি যা করব তা আর কেউ পারবে না।

 উলূক কৌরবশিবিরে ফিরে গিয়ে সব কথা জানালেন।