পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩৬৩

থেকে পালাতেও দেখা যায়। কর্ণ দয়ালু ও অসাবধান, সেজন্য আমিও এঁকে অর্ধরথ মনে করি।

 ক্রোধে চক্ষু বিস্ফারিত ক’রে কর্ণ বললেন, পিতামহ, আপনি বিনা অপরাধে আমাকে বাক্যবাণে পীড়িত করেন, দূর্যোধনের জন্যই আমি তা সহ্য করি। আমার মতে আপনিই অর্ধরথ। লোকে আবার বলে ভীষ্ম মিথ্যা কথা বলেন না! আপনি ইচ্ছামত রথী আর অতিরথ ব’লে যোদ্ধাদের মধ্যে ভেদ সৃষ্টি করছেন। ভীষ্ম সর্বদাই কৌরবগণের অহিতাচরণ করেন, কিন্তু আমাদের রাজা তা বোঝেন না। দুর্যোধন, ভীষ্মের অভিসন্ধি ভাল নয়, তুমি এঁকে ত্যাগ কর। ইনি সকলের সঙ্গেই স্পর্ধা করেন, কাকেও পুরুষ ব’লে গণ্য করেন না, অথচ এঁকে দেখলে সব পণ্ড হয়।[১] বৃদ্ধের বচন শোনা উচিত, কিন্তু অতিবৃদ্ধের নয়, তাঁরা বালকের সমান। ভীষ্ম জীবিত থাকতে আমি যুদ্ধ করব না, এঁর মৃত্যুর পর আমি বিপক্ষের সকল মহারথের সঙ্গেই যুদ্ধ করব।

 ভীষ্ম বললেন, সূতপুত্র, যুদ্ধ আসন্ন, এ সময়ে আমাদের মধ্যে ভেদ হওয়া অনুচিত, সেই কারণেই তুমি জীবিত রইলে। স্বয়ং জামদগ্ন্য পরশুরাম আমাকে অস্ত্রাঘাতে পীড়িত করতে পারেন নি, তুমি আমার কি করবে?

 দুর্যোধন বললেন, পিতামহ, আমার কিসে শুভ হবে সেই চিন্তা করুন, আপনাদের দুজনকেই মহৎ কর্ম করতে হবে। এখন বলুন পাণ্ডবপক্ষে রথী মহারথ ও অতিরথ কে কে আছেন।

 ভীষ্ম বললেন, যধিষ্ঠির নকুল সহদেব প্রত্যেকেই রথী। ভীম আট রথীর সমান। স্বয়ং নারায়ণ যাঁর সহায় সেই অর্জুনের সমান বীর ও রথী উভয় সৈন্যের মধ্যে নেই, কেবল আমি আর দ্রোণাচার্য তাঁর সম্মুখীন হ’তে পারি। দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্র সকলেই মহারথ। বিরাটপুত্র উত্তর, উত্তমৌজা, যুধামন্যু, এবং দ্রুপদপুত্র শিখণ্ডী এঁরা উত্তম রথী। অভিমন্যু, সাত্যকি ও দ্রোণশিষ্য ধৃষ্টদ্যুম্ন— এঁরা অতিরথ। বৃদ্ধ হ’লেও দ্রুপদ ও বিরাটকে আমি মহারথ মনে করি। ধৃষ্টদ্যুম্নের পুত্র ক্ষত্রধর্মা এখনও বালক সেজন্য অর্ধরথ। শিশুপালপুত্র ধৃষ্টকেতু, জয়ন্ত অমিতৌজা, সত্যজিৎ, অজ, ভোজ ও রোচমান—এঁরা মহারথ। কেকয়দেশীয় পঞ্চ ভ্রাতা, কাশীরাজ কুমার, নীল, সূর্যদত্ত, শঙ্খ, মদিরাশ্ব, ব্যাঘ্রসেন, চন্দ্রদত্ত, সেনাবিন্দু, ক্রোধহন্তা, কাশ্য—এঁরা সকলেই রথী। দ্রুপদপুত্র সত্যজিৎ, শ্রেণিমান ও বসুদান

  1. ভীষ্ম নিঃসন্তান এই কারণে।